সম্প্রসারিত ভাব: মহান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণী এবং বস্তুকে অন্যের পরিপূরক হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিতত্ত্বের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে কারােরই আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্যে জন্ম হয়নি। পরস্পরের মঙ্গল ও উপকার করার সৎ উদ্দেশ্যেই সকলের জন্ম হয়েছে। সুতরাং পরের মঙ্গল ও উপকার করার মধ্যেই জন্মলাভের সার্থকতা নিহিত। পুষ্প যেন আদর্শ ব্যক্তিজীবনেরই প্রতিচ্ছবি। পরিস্ফুট ফুলের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য সার্থক হয়ে ওঠে তখনই যখন অন্যের রূপতন্ময় দৃষ্টিকে সে সুধারসে ভরে তােলে। ফুল তার সৌন্দর্য, পবিত্রতা এবং সৌরভের জন্যে মানুষের কাছে পরম আকাঙ্ক্ষিত এবং আদরণীয়। ফুলেরও বৈচিত্র্য আছে। কোনাে ফুল মানুষকে তার বর্ণের সমারােহ দান করে, কোনাে ফুল দেয় তার অনুপম সৌরভ। প্রস্ফুটিত পুষ্প তার সৌন্দর্য ও সুরভিতে সবাইকে বিমুগ্ধ করে। পুষ্প কখনােই তার সৌন্দর্য, সুরভি ও মাধুর্যকে স্বীয় স্বার্থে ব্যয় করে না। বরং অন্যের হৃদয়বৃত্তিতে মধুচক্রের প্লাবন ঘটিয়ে সে সার্থক হয়। পৃথিবীর সাধু ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণ অন্যের মঙ্গলার্থে নিজের জীবন অবলীলায় উৎসর্গ করতে ব্যাকুল। তাঁরা পুষ্পের মতােই নিজের সর্বস্ব মানবকল্যাণে বিলিয়ে দিয়ে তৃপ্তি লাভ করেন, পরের কল্যাণে আত্মোৎসর্গ করতে দ্বিধাবােধ করেন না। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্নের জন্যে তার অন্তর্নিহিত মানবীয় গুণাবলিকে জাগ্রত করতে হবে। পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে জীবনের পরম সার্থকতা প্রতিপন্ন করতে হবে। যে ব্যক্তি আত্মকেন্দ্রিক ও স্বীয়স্বার্থ লাভের নেশায় মত্ত, সে দেশ ও জাতির জন্যে অভিশাপস্বরূপ।
মন্তব্য: মানুষের জন্মলাভের মূল উদ্দেশ্য নিজেকে পুষ্পের মতাে বিকশিত করা এবং স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বিশ্বমানবের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করা। আর এখানেই মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত।
Post a Comment