SkyIsTheLimit
Bookmark

স্বদেশপ্রেম রচনা

ভূমিকা: নিজ দেশের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাই হল স্বদেশপ্রেম। স্বদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ আমাদের নিকট অতি প্রিয় ও পবিত্র। জন্মের পর থেকেই মানুষ স্বদেশের মাটিতে বেড়ে ওঠে। যেকোন মানুষই নিজ জন্মভূমির পরিবেশ ও মানুষ দের মাঝেই বড় হয়ে উঠতে চায়। মানুষের শরীরের সমস্ত অঙ্গে দেশের উপাদান মিশে আছে। ফলে দেশ ও দেশের প্রতি তার যে ভালবাসা তা দায়িত্ব ও কর্তব্যের রূপ নেয়। বস্তুত নিজ জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসার মধ্যেই  দেশপ্রেম লুকিয়ে আছে।

দেশপ্রেমের স্বরূপ: স্বদেশপ্রেম অর্থাৎ দেশের প্রতি ভালোবাসা এক কথায় বলতে গেলে সকল মানুষের এক স্বভাবজাত গুণ। মানুষ সমগ্র বিশ্বের বাসিন্দা হলেও একটি নির্দিষ্ট দেশ বা ভূখন্ডে সে বেড়ে উঠে।একটি বিশেষ দেশের অধিবাসী হিসেবে সে পরিচয় লাভ করে। এ দেশই তার জন্মভূমি, তার স্বদেশ। মানুষ নিজ জন্মভুমি তে জন্মগ্রহণ করে ও তার দেশের ভালোবাসায় লালিত-পালিত হয়। নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সকল উপাদান সে স্বদেশ থেকেই পায়। ফলে স্বদেশের প্রতি তার প্রবল মমত্ববোধ ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। এ কারনেই মানুষ স্বদেশের গৌরবে গৌরবান্বিত হয় এবং স্বদেশের অপমানে অপমাণিত হয়।একজন দেশপ্রেমিক স্বদেশের স্বাধীনতা ও মান-মর্যাদা রক্ষার জন্য নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত থাকে।

কবি সমুদ্রগুপ্ত বলেছেন, 

"স্বদেশপ্রেম থেকে বিশ্বপ্রেম, যে নিজের দেশকে

     ভালোবাসে, সে বিশ্বপ্রেমিক, মানব-প্রেমিক মানবতাবাদী"

ছাত্রজীবনে স্বদেশ প্রেমের শিক্ষা: স্বদেশপ্রেম মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি হলেও এ গুণটি নিজে থেকে অর্জন করতে হয়। তাই ছাত্রজীবন থেকেই দেশপ্রেমের শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করতে হয়। প্রত্যেক মানুষকেই দেশের মাটি ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা উচিত। প্রত্যেক ব্যক্তির ছাত্রজীবনে যে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয় তা তাদের মনে আজন্মকাল লালিত পালিত হয়। কেননা আজকের ছাত্র-ছাত্রীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

ভবিষ্যতে নিজ‌ নিজ দেশের ভালো-মন্দ বিচার করার দায়িত্ব তাদের উপরই অর্পিত হবে। এজন্য দেশের বিপদে-আপদে ও প্রয়োজনে ছাত্র-ছাত্রীদেরকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকেই এই ভূমিকা পালন করতে হবে।

যদি প্রয়োজন হয় তবে দেশের স্বার্থে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে তাদের জীবন উৎসর্গ করতে হবে। যেমনটি কিছু বছর আগে ছাত্ররা করেছিল, ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আন্দোলন করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এবং ১৯৭১ সালে যুদ্ধে অকাতরে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করে।

স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম: স্বদেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেম আলাদা কিছু নয়। প্রকৃতপক্ষে স্বদেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়েই বিশ্বকে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। দেশপ্রেম যদি বিশ্ববন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সহায়ক না হয় তবে তা কখনই প্রকৃত দেশপ্রেম হতে পারে না। জাতি, ধর্ম, বর্ণ সকল কিছু নির্বিশেষে সকলকেই দেশপ্রেমের চেতনায় উৎসাহিত হতে হবে। যে নিজের দেশকে ভালোবাসে না সে অন্য দেশ বা দেশের মানুষ কেও ভালোবাসতে পারবে না। তাই দেশপ্রেমের মধ্যেই বিশ্বপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।

দেশপ্রেমের অভিব্যাক্তি: দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালবাসা, যে বন্ধন, যে আকর্ষণ তা থেকেই স্বদেশপ্রেমের উদ্ভব। এ কারনে প্রত্যেক মানুষের কাছে তার জন্মভূমি স্বর্গের থেকেও মহৎ বলে মনে হয়, তার কাছে তার জন্মভূমি সকল দেশের সেরা মনে হয়। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এই স্বদেশপ্রেম আবেগ লুকিয়ে থাকে। এই আবেগ লাগে দেশের সকল মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করার জন্য। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে এই স্বদেশপ্রেম আবেগের উদ্ভব ঘটে। নিজের দেশকে ভালবেসে প্রাণ দিতেও দ্বিধা বোধ করে না মানুষ। বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের পাতায় দেখতে পাওয়া যায় দেশপ্রেমকে ভিত্তি করে প্রাণ বিসর্জন করেছেন কতজন দেশপ্রেমিক। 

উপসংহার: প্রত্যেক মানুষেরই তার জন্মভূমি ভীষণ প্রিয় এবং সেই জন্মভূমি রক্ষার দায়িত্বও প্রত্যেক মানুষের। তবে সকলকে মনে রাখতে হবে যে নিজের দেশকে রক্ষা করার নামে অপর মানুষকে আক্রমণ করা মানবতাবিরোধী কর্ম।

তাই জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের উচিত স্বদেশকে ভালোবাসা এবং স্বদশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা। 

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, 

" সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে,

সার্থক জনম মা গো, তোমায় ভালোবেসে"


লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment