SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা চরিত্র

ভূমিকা:
'The crown and glory of life is character.' চরিত্র মানুবজীবনের গৌরবমুকুট। চরিত্র বলতে আমরা বুঝি- বাকে্য, করমে এবং চিন্তায় একটি পবিত্র ভাব । চরিত্র একটি মানুষের জীবনাচরণের পূর্ণাঙ্গ রূপ। মানুষ চারিত্রিক উৎকর্ষের জন্যে সমাজে শ্রদ্ধার পাত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়। আবার চরিত্রহীন ব্যক্তি অনেক ধন-সম্পদ থাকা সত্ত্বেও সমাজের চোখে অপাঙক্তেয়ই থেকে যান। মােটকথা শিক্ষা অর্জনের অন্যতম উদ্দেশ্য চরিত্র গঠন করা।
চরিত্র: মানুষের জীবনে কাজে-কর্মে, কথায়-চিন্তায়, ওঠা-বসায়, আচার-আচরণে প্রতিটি ক্ষেত্রের পরিশুদ্ধ রূপকেই চরিত্র বলে। গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সত্যনিষ্ঠা, দায়িত্বশীলতা ইত্যাদি গুণ যার মাঝে প্রকাশ পায় তাকে সচ্চরিত্র বলে মনে করা হয়। মানুষ জ্ঞানে ও কর্মে সকল প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠ। মানুষের এ শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান সােপান হলাে চরিত্র। চরিত্র মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সম্পদ যেমন মানুষকে বাচার নিশ্চয়তা দেয়, চরিত্রও তেমন। সচ্চরিত্র, সদাচারী মানুষ মরেও অমর। তাদের কর্ম, সেবা, ব্যবহার মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে যায় এবং চিরজাগরুক থাকে। সচ্চরিত্রের লক্ষণ: সমস্ত ঈর্ষা-বিদ্বেষ, অন্যায়, অহমিকাবােধ ও দাম্ভিকতা থেকে মুক্ত ব্যক্তিই সমাজে চরিত্রবান বলে বিবেচিত। চরিত্রবান ব্যক্তি কখনও সত্য হতে স্থালিত হন না, অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন না, ক্রোধে আত্মহারা হন না, কারও সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করেন না। তিনি সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ও ভক্তিপরায়ণ হয়ে থাকেন।
চরিত্র গঠনের উপায়: পরিবার চরিত্র গঠনের প্রধান স্থান। সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের স্তর অনুযায়ী শিশুর চরিত্র গঠিত হয়। চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থার ভূমিকা মুখ্য। কথায় বলে 'সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।' আবার, 'সঙ্গ দোষে লােহা ভাসে।' তাই শিশু যেন কু-সঙ্গে মিশতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চরিত্র সাধনার ধন। বহুদিনের সাধনার দ্বারা তা অর্জন করতে হয়। পরিবারের বাইরে প্রতিবেশীরা ও সহচরেরা শিশুদের চরিত্র গঠনে সহায়তা করে। বিদ্যালয়ে পাঠাভ্যাসকালে বা সমবয়স্কদের সঙ্গে সঙ্গ প্রভাবে চরিত্র নানাবূপ পরিগ্রহ করে। সেজন্যে অভিভাবক বা শিক্ষকবৃন্দের উচিত লেখাপড়ার ভেতর দিয়ে শিশুদের চরিত্র যথাযথভাবে গড় উঠছে কি না সে বিষয়ে তীক্ষ্ম নজর রাখা। চরিত্র গঠনে ধর্মের প্রভাব ব্যাপক। কারণ ধর্ম অসত্য ও অন্যায় থেকে বিরত থাকতে প্রেরণা জোগায়। 
চরিত্র গঠনে স্বীয় সাধনা: স্বীয় সাধনা চরিত্র গঠনের সবচেয়ে বড় উপায়। সচ্চরিত্র মানুষের সাধনার ধন। বহুদিনের সাধনার দ্বারা চরিত্র অর্জন ও তা রক্ষা করতে হয়। জগতের হাজারাে প্রলােভনে পড়ে মানুষ বিপথে চালিত হয়। কিন্তু যিনি সচ্চরিত্র, আপন শক্তিতে বলীয়ান তিনি হাজার প্রলােভন সত্ত্বেও সর্বদা সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে দৃঢ় থাকেন ও সংগ্রাম করেন। আর এরকম সংগ্রামী হওয়া বা দঢ় অবস্থান গ্রহণ একমাত্র কঠোর সাধনার দ্বারাই সম্ভব। 
চরিত্র গঠনে ধর্মের ভূমিকা: চরিত্র গঠনে ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পৃথিবীর সকল ধর্মেই মানুষকে সচ্চরিত্র ও আদর্শবান হতে বলা হয়েছে। সকল ধর্মেই সচ্চরিত্রকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে তােমাদের মধ্যে সবচেয়ে ধার্মিক সেই ব্যক্তি যার আখলাক বা চরিত্র সবচেয়ে ভালাে। কাজেই মানুষ তার নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে এবং সেই ধর্মের কথা মেনে চলে চরিত্রবান হতে পারে । 
মহামানবদের আদর্শ: পৃথিবীতে যে সকল মহামানব প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছেন, তারা সকলেই ছিলেন চরিত্রবান। মহাপুরুষগণ আপন চরিত্রবলে জগতে অসাধ্যকে সাধন করে গেছেন, অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব। মহামানব হযরত মুহম্মদ (সা), যীশু খ্রিষ্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহাপুরুষ চরিত্র বলে বিশ্ব ইতিহাসে মহান ব্যক্তিত্ব হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। 
চরিত্রের মূল্য: বিশ্বের স্মরণীয় মহাপুরুষগণ চরিত্রকে মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে অভিহিত করেছেন। চরিত্র সকল সম্পদের উর্ধ্বে। চরিত্রবান ব্যক্তি সর্বজাতির নমস্য। চরিত্রের বলে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পেরেছে। চরিত্রবান ব্যক্তির অদম্য কর্মশক্তিতে মানবজাতির মহাকল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। কথায় আছে 'ধনীর জোর ধনের, আর চরিত্রবানের জোর মনের। যিনি চরিত্রবান, তিনি মানবশ্রেষ্ঠ। হাদিসে বর্ণিত আছে- 'ঈমানদার সেই ব্যক্তি, যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী। চরিত্রই মানুষকে মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। চরিত্র মানবৃজীবনের অমূল্য সম্পদ। শুধু চরিত্রবান লােকই পৃথিবীতে মহৎ কাজ করতে পারেন। তাদের কর্মসাধনায় পৃথিবী আজ এমন সুন্দর রূপে গড়ে উঠেছে। চরিত্রবান ব্যক্তির মাঝে উন্নত ও উত্তম গুণাবলির সাক্ষাৎ মেলে। এসব গুণের দ্বারাই চরিত্রবান ব্যক্তি সকলের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হন। যে সমাজের লােকেরা চরিত্রবান, সে সমাজের অগ্রগতি অবধারিত। জগতের সবকিছুই কেড়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু সচ্চরিত্ররূপ সম্পদ কখনও কেড়ে নেওয়া যায় না। শত বাধা-বিঘ্নও চরিত্রবান ব্যক্তির পথ রােধ করতে পারে না। 
চরিত্রহীনতার কুফল: মানবের স্বর্গসম্পদ একমাত্র চরিত্র। যার চরিত্র নেই, তার কিছুই নেই। চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম। সে সকলের ঘৃণার পাত্র। সে মানুষ নামের কলঙ্ক। মানুষের জীবনে সব পাওয়া সম্ভব, যদি সে চেষ্টা করে। কিন্তু চরিত্র হারালে সবকিছু হারাতে হয়। চরিত্রহীন ব্যক্তির বিদ্যা-বুদ্ধি, ধন প্রভৃতি যতই থাকুক না কেন, কিছুতেই সে মানুষের মন জয় করতে পারবে না। চরিত্রহীনকে সকলেই ঘৃণা করে। তারা শুধু মানুষের অভিশাপ ও অপবাদের পাত্র হয়ে থাকে। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- 'When wealth is lost nothing is lost, when health is lost something is lost, but when character is lost everything is lost.' 
উপসংহার: বস্তুত চরিত্র যদি একবার নষ্ট হয়ে যায়, তবে সমাজে তার আর কোনাে মূল্য থাকে না। এ চরিত্রই মানুষকে সুন্দরভাবে বিকশিত করে। মানুষের বিদ্যা-বুদ্ধি, ধন-দৌলত যত কিছুই থাকুক না কেন, চরিত্রবান না হলে তারা কখনও দেশ ও জাতির কল্যাণ করতে পারবে না। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যে চরিত্রহীন লােকগুলােই মূলত দায়ী। তাই আমাদের সকলকে চরিত্রবান হতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment