SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা স্বনির্ভরতা

উন্নয়নের কর্মধারা
বা নিজের পায়ে দাঁড়াও
বা স্বনির্ভরতা ও বাংলাদেশ
ভূমিকা : স্বনির্ভরতা বলতে অন্য কারও সাহায্যের উপর নির্ভর না করাকে বােঝায়। আর কোন দেশের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বলতেও সে দেশে অন্য দেশের উপর নির্ভর না করাকেই বােঝায়। দেশকে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে তুলতে হলে অন্য দেশের উপর নির্ভর করা চলবে না। নিজেদের সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা প্রতে্যক স্বাধীন দেশেরই কর্তব্য। দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে অবশ্যই নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, অপরের উপর নির্ভর করলে চলবে । বিভিন্ন দিক থেকে দেশকে স্বাবলম্বী করে তুললেই দেশ স্বনির্ভরতা অর্জনে সক্ষম হবে।
স্বনির্ভরতার স্বরূপ : বস্তুত বিশ্বের কোন দেশই আত্মনির্ভর হয়ে থাকতে পারে না। সমগ্র বিশ্বে জীবনধারণের প্রয়ােজনীয় সম্পদ ছড়িয়ে রয়েছে। সকল দেশের জন্য সকল জাতির পারস্পরিক সহযােগিতার ভিত্তিতে বিশ্বের মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে চলেছে। বর্তমান বিশ্বের ব্যাপক বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার প্রেক্ষিতে কোন দেশের পক্ষে অন্যের সাহায্য ছাড়া নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা মােটেই সম্ভবপর নয়। বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলাে সর্বতােভাবে উন্নত দেশগুলাের উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত এসব উন্নত দেশও আবার তলের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলাের উপর নির্ভর করে আছে। আবার অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের সাহায্যে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। সারা বিশ্বের এ পারস্পরিক সহযােগিতা মানুষের জীবনকে করেছে অভাবমুক্ত। কিন্তু কোন কোন শক্তিধর উন্নত দেশ তার সুবিধাভােগী অনুন্নত দেশের উপর নানাভাবে শােষণ চালায়। ফলে সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। যে কোন দেশের পক্ষে এ ধরনের নতজানু পরনির্ভরশীলতা অগৌরবের। জাতির জীবন থেকে এ ধরনের অগৌরবের বোঝা অপসারণ করতে হলে সর্বাগ্রে তাকে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। তবে বিশ্বের সব দে কোন-না-কোন ব্যাপারে অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয় এবং নিজের উদ্বৃত্ত সম্পদের সাহায্যে অন্য দেশ থেকে প্রয়ােজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে হয়।
স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে : স্বনির্ভরতা পটভূমিকায় প্রথমেই বাংলাদেশের সমস্যাগুলাে বিবেচনা করা যায়। অতীতের এককালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অতীত গৌরব আজ ধূসর স্মৃতি মাত্র। দু’শ বছরের ইংরেজ শাসন ও চব্বিশ বছরের পাকিস্তানী শােষণের পর এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফসল বাংলাদেশ আজ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন। তাছাড়া পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশে প্রায় বারাে কোটি মানুষের বাস। এজন্যে খাদ্য সমস্যা এখানে প্রকট। প্রয়ােজনীয় খাদ্যশস্য এদেশে উৎপন্ন না হওয়ার ফলে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। শুধু খাদ্যশস্যই নয়, আরও বহু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যদেশের কাছে-সাহায্য প্রার্থী। স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে অপর দেশের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশের সম্পদকে এমনভাবে কাজে লাগাতে হবে, যা দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে সক্ষম হয়। নানামুখী পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষত খাদ্যোৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য অত্যধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতি বছর যদি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়, তবে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন মােটেই সম্তবপর নয়।
গৃহীত ব্যবস্থা : বাংলাদেশের স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্যে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনে সরকার অত্যন্ত তৎপর। আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদ পদ্ধতির প্রয়ােগ, উন্নততর সার ও বীজের ব্যবহার, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে যাতে দেশে সামগ্রিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়ে উঠতে পারে, সেদিকে সরকার দৃষ্টি দিয়েছেন। পৃথক পৃথকভাবে দেশের বিভিন্ন অংশবিশেষ ও প্রত্যেক জেলায় স্বতন্ত্রভাবে স্বনির্ভরতার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, সিলেট প্রভৃতি জেলায় খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বস্তুত দেশ বর্তমানে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে এগুচ্ছে। দেশে সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশকে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 
উপসংহার : স্বনির্ভরতা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেওয়া প্রয়ােজন। জাতির জীবনের দারিদ্র্য দূর করে, বিদেশের সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটিয়ে, সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলতে পারলেই স্বনির্ভরতার আন্দোলন অর্থবহ হয়ে উঠবে। ব্যক্তি জীবনের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা সম্ভবপর হলে তা জাতীয় জীবনের উপকারে আসবে। স্বনির্ভরতা আন্দোলনের সাথে জনগণের সক্রিয় সহযােগিতা প্রয়ােজন। সকলের আন্তরিক সহযােগিতায় স্বনির্ভর আন্দোলন সফল হতে বাধ্য।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment