SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব

মানবসম্পদ ও শিক্ষা 
বা শিক্ষা ও বাংলাদেশের উন্নয়ন
বা বাংলাদেশে শিক্ষার গুরুত্ব
ভূমিকা : মানব সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করলেই মানুষের যােগ্যতা বা মনুষ্যত্ব বিকশিত হয়ে উঠে না। জন্মের পর মানুষকে নানাবিধ শিক্ষার মাধ্যমে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলতে হয় মানুষকে শিক্ষার্জনের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হতে হয়। স্রষ্টার সৃষ্টি মানব সন্তানকে উন্নততর মানুষে পরিণত করাই শিক্ষার লক্ষ্য একটি মানুষ কিভাবে মানবসম্পদে পরিগণিত হবে তার ব্যবস্থা করা হয় শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষিত জনশক্তিই দেশের প্রকৃত সম্পদ। এ সম্পদের উন্নতি না হলে দেশ ও জাতির উন্নাত সম্ভব নয়। তাই মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে।
মানবসম্পদ : বর্তমান বিশ্বে মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি দেশের নির্দিষ্ট জনগােষ্ঠীই সে দেশের মানবসম্পদ। মানবসম্পদ যত কর্মঠ হয় জাতি হয় তত উন্নত। কিন্তু মানবসম্পদ অকেজো বা অকর্মণ্য হলে তা দেশ ও জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমান বিশ্বে শিক্ষাকে মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার বলে গণ্য করা হয়। উন্নত দেশে শিক্ষা বিভাগ এখন মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ নামে পরিচিত। একজন মানুষকে সম্পদ বলা যায় তখনই যখন সে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শিক্ষার বদৌলতে মানুষ সম্পদ হলে জাতীয় জীবনের জন্য তা হয়ে উঠে কল্যাণকর। অপরদিকে তার শিক্ষা যখন জাতির জন্য কোন কাজে আসে না তখন তা জাতির বােঝা হয়ে দাড়ায়। অর্থাৎ ,শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি ব্যতীত একটি দেশের উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়।
মানবসম্পদের অগ্রগতি সাধনে শিক্ষা : সুদক্ষ জনগােষ্ঠী গঠন ও অগ্রগতি সাধনে শিক্ষার বিকল্প নেই। উন্নত বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে বলে সেখানে মানুষ শক্তিশালী সম্পদে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষার সুযােগ কম। জীরিকার সংস্থান করতে পারে এমন শিক্ষার সুযােগ আরাে কম। বিপুল জনসংখ্যার ভারে জাতি বিপর্যস্ত। মানুষ যে হারে বাড়ছে সে হারে শিক্ষার সুযােগ বাড়ছে না। তাছাড়া যে ধরনের শিক্ষার ফলে মানুষ সম্পদে পরিণত হতে পারে সে ধরনের শিক্ষার সুযােগ খুবই কম। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান যেমন প্রকৌশল , কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি‌। জনসংখ্যার অনুপাতে খুবই কম। পক্ষান্তরে, ছাত্রছাত্রীরা কর্মমুখী শিক্ষার সুযােগ না পেয়ে সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে বেকারত্ব বরণ করছে। এক্ষেত্রে শিক্ষা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জীবিকার সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এবং সে শিক্ষা ব্যক্তি ও জাতীয় জীবন কোন অগ্রগতি বয়ে আনতে পারছে না।
সম্পদের জন্য শিক্ষা : শিক্ষিত জনগােষ্ঠী একটি দেশের প্রাণশক্তি। অশিক্ষিত মানুষ জড় পদার্থের তুল্য। শিক্ষ না থাকলে মানুব তার মেধাকে উপযুক্ত কাজে লাগাতে পারে না। পথিবীর যেসকল দেশ উন্নতির চরম শিখরে উনীত হয়েছে সেসকল দেশের জনগণ সুশিক্ষিত। আর যেসব দেশের মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে তাদের বেশির ভাগই অজ্ঞ ও অশিক্ষিত। শিক্ষা মানুষের জ্ঞান ও শক্তির দুয়ার খুলে দেয়। ফলে মানুষ সমৃদ্ধ সম্পদে পরিণত হয়। অঢেল সম্পদের অধিকারী দেশেও জনগােষ্ঠী যদি অশিক্ষিত হয় তবে সম্পদের সদ্ব্যবহার তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা অশিক্ষার কারণে অন্যের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়। তাই মানুষকে দক্ষ সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। 
আমাদের জাতীয় জীবনে শিক্ষা : আমাদের দেশের নানা সমস্যা পর্যালােচনা করে বলা যায়, প্রচলিত শিক্ষা জাতীয় জীবনে কার্যকর হয়ে উঠছে না। এখানে শিক্ষার সাথে জীবিকার সংযােগ নেই, জীবনের প্রয়ােজনের সাথে শিক্ষার মিল নেই অথচ শিক্ষাকে যথার্থ কাজে লাগিয়ে বিশ্বের উন্নত দেশগুলাে তাদের মানুষকে প্রকৃত সম্পদে পরিণত করে জাতীয় জীবনে সীমাহীন উন্নতি সাধন করছে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধোত্তর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সর্বোচ্চ আসনে স্থান করে নিয়েছে। এ অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণ হচ্ছে সময়ােপযােগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম আর মেধাকে কাজে লাগান। যারা প্রকৃতিকে জয় করে প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগিয়ে নব নব প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে দেশ ও জাতির কল্যাণ সাধন করছে তারাই আজ সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাই মানুষকে সম্পদে পরিণত করতে হলে আমাদের শিক্ষাক্রমকে কর্মমুখী করতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। সাধারণ উচ্চ শিক্ষার মােহ কাটিয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহশীল হলে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা কমে আসবে।
সমাজ ও সভ্যতার বাহন হিসেবে শিক্ষা : শিক্ষা সমাজ ও সভ্যতার প্রধান বাহক। শিক্ষার সুফল বর্তমান সভ্যতা দাড়িয়ে আছে শিক্ষারই ভিতের উপর। এ ভিত দুর্বল হলে জাতিও দুর্বল হয়। এছাড়া বর্তমান বিশ্ব প্রতিযােগিতার বিশ্ব। এ প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে হলে কর্মমুখী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। প্রতিযােগিতায় টিকতে না পারলে জীবনে নেমে আসবে অভিশাপ | আর যারা প্রতিযােগিতায় টিকে থাকবে তারা উন্নত বিশ্বের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। এ কারণে মানুষকে। শিক্ষার ব্যাপারে অধিক সচেতন হতে হবে। সে সাথে স্মরণ রাখতে হবে, যে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে কাজের মানুষ করে গড়ে তােলা যায় তাই জীবন মুখী শিক্ষা। এ জীবনমুখীশিক্ষা শিক্ষা মানুষকে সম্পদে পরিণত করে তােলে। 
আশু কর্তব্য : বাংলাদেশের মানুষ নানা সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত। দেশের এসব সমস্যার প্রেক্ষিতে শিক্ষা তথা কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। এ শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির ব্যবস্থা করে নিজেদের উন্নয়নের জন্য তৎপর হতে হবে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে দেশে উৎপাদিত পণ্য বিশ্ব বাজারে বাজারজাত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত হয়ে অর্থনৈতিক অবসথার পরিবর্তনের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার প্রদত্ত সুযােগ-সুবিধার যেমন সদ্ব্যবহার করতে হবে তেমনি আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে শিক্ষিত বেকারদের সমস্যা দূর করতে হবে। তবেই দেশের চৌদ্দ কোটি মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হবে। 
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষিত মানবগােষ্ঠীই প্রকৃত মানবসম্পদ। মানবসম্পদকে যুগােপযােগী করতে হলে শিক্ষার ভূমিকা অপরিহার্য। শিক্ষার আলাে ছাড়া মানুষের অন্তর আলােকিত হয় না। অজ্ঞ ও অশিক্ষিত জনগােষ্ঠী দেশ ও সমাজের বােঝাষরূপ। শিক্ষাই মানুষের মেধা শক্তিকে জাগ্রত ও বিকশিত করে। শিক্ষাই পারে মানুষের কর্ম অক্ষমতা দূর করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে। সুতরাং, মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment