SkyIsTheLimit
Bookmark

বিজয় দিবস রচনা

১৬ই ডিসেম্বর 
বা বিজয়ের চেতনা
বা জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য
ভূমিকা : ষােলই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ দিনটি জাতীয় জীবনে একটি অনন্য দিন হিসেবে বিবেচিত এ কারণে যে, ১৯৭১ সালের ষােলই ডিসেম্বর তারিখে বাংলাদেশের বিজয়ের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের অবসান ঘটেছিল। স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয়ের এ দিনে জাতি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করে। এখান থেকেই শুরু হয় জাতির এক নবযাত্রা। এ দিনে বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র বাংলাদেশের সগৌরবের আবির্ভাবকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদার আসন লাভ করে। তাই বিজয় দিবস জাতির মর্যাদা ও গৌরবের দিন, জাতির গর্বের দিন।
বিজয় দিবসের ইতিহাস : বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সাথে জাতির রক্তাক্ত সংগ্রামের ইতিহাস জড়িত। পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের যে সূত্রপাত হয়েছিল তার প্রেক্ষিতেও বিজয় দিবস তাৎপর্যপূর্ণ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে যে অধিকারের দাবি উথিত পায়। ১৯৭১ সালে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে তা চরমে উঠলে অত্যাচারী ও শশাষণকারী, পাকিস্তানি সামরিক জান্তা দমননীতি শুরু করে এবং তথাকথিত বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমনের নামে সামরিক অভিযান শুরু করে। ২৫শে মার্চের কাল রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু হয় তার নমুনা ইতিহাসে বিরল। একটি প্রবল শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আধুনিক অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করার অভিযান শুরু করে। বাধ্য হয়ে আক্রমণ প্রতিরােধ করার জন্য শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘােষণার পর সংগঠিত মুক্তিবাহিনী নয় মাসের যুদ্ধে শত্রুপক্ষকে মারাত্মকভাবে ঘায়েল করে। মুক্তিযােদ্ধারা সীমান্তে ও দেশের ভিতরে থেকে শত্রুপক্ষের উপর গেরিলা আক্রমণ চালিয়ে তাদের বিপর্যস্ত করে। দেশের লোকজনও হানাদার বাহিনীকে ধ্বংস করা ও হঠানাের জন্য ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের সহযােগিতা করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী মিত্র বাহিনী নামে হানাদার বাহিনীকে অল্প সময়ে পর্যুদস্ত করে। পাকিস্তানি বাহিনী বাধ্য হয়ে বিনাশর্তে আত্মসমর্পণ করে। এ আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বিকাল ৫টা ১ মিনিটে ঢাকাস্থ রেসকোর্স ময়দানে, বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ সাথে সূচিত হয় বাংলাদেশের মহান বিজয়। সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর পরই বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের যে শাসন ও শােষণ নীতির শিকার হয়েছিল এক রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে এ ষােলই ডিসেম্বরে তার অবসান ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালি স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রামে জেল জুলুম আর হত্যার যে বিভীষিকা প্রত্যক্ষ করেছে তার সমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালের ষােলই ডিসেম্বরে বিজয় দিবসে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য : বাংলাদেশের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বাধিকার আন্দোলনের আর নয় মাসের রক্তাকত্ত মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ষােলই ডিসেম্বর জাতির ইতিহাসে একটি অনন্য দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিজয় দিবসের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্ব-পরিচয়ে সগৌরবে মাথা তুলে দাড়ানাের সুযােগ দান করেছে ষােলই ডিসেম্বর। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের এবং জাতির মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ দিনটির ফলশ্রুতি হিসেবে। যােলই ডিসেম্ধর জাতিকে দিয়েছে বীরের মর্যাদা। জাতিকে দিয়েছে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের এবং নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে, যে নিষ্ঠুর নিপীড়ন সহ্য করেছে তা সার্থকতায় মণ্ডিত হয়ে উঠেছে এ বিজয়ের মাধ্যমে। তাই বিজয় দিবস জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী।
দেশবাসীর কর্তব্য : ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এ বিজয় জাতীয় জীবনে স্থিতিশীল করে রাখার ব্রত রক্ষা করে বেয়ে অবলম্বন করতে হবে। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা রক্ষা করে বেঁচে থাকার জন্য বিজয়ের চেতনাকে সঞ্জীবিত করে রাখা দরকার। যে উদ্দেশ্য এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এ বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে সে শােষণ মুক্ত সমাজ গঠনে সে চেতনাকে কাজে লাগাতে হবে। স্বাধীন দেশ হিসেবে সগৌরবে মাথা তুলতে হলে দেশের কল্যাণের জন্য সকল মানুষকে আত্মােৎসর্গের চেতনায় কাজ করতে হবে। জাতীয় জীবনে সমস্যার অন্ত নেই। অশিক্ষা আর দারিদ্র্য দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে আছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য জাতির সকল মানুষকে কাজ করতে হবে। জাতির কল্যাণ সাধনই হবে স্বাধীন জাতির লক্ষ্য। তাহলেই বিজয়ের দায়িত্ব পালন সম্ভব হবে।
উপসংহার : প্রতি বছর ১৬ই ডিসেম্বর আসে বিজয় দিবসের মহান তাৎপর্য নিয়ে। যারা এ বিজয়ের জন্য প্রাণ দিয়েছে জাতি তাঁদের অমর স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। জাতি এইদিন পরমানন্দে বিজয় দিবস পালন করে। সে সাথে শহীদদের কথা স্মরণ করে। আনন্দোৎসব আর স্মৃতিচারণ, আলােচনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিনটি উদযাপন করা হয়। তবে বিজয় দিবস উদযাপন শুধু আনন্দ উপভােগের অনুধাবন নয়, এ দিনের প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হবে। যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ফলশ্রুতি হিসেবে এ বিজয় দিবস অর্জিত হয়েছে সে সংগ্রামের আত্মােৎসর্গের কথা মনে রাখতে হবে এবং সে দিকে এগি”ে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতিকে উন্নতির দি বিজয় দিবসের অঙ্গীকার। এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশকে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য হবে বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment