SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন

বর্তমান সভ্যতায় বিদ্যুতের ভূমিকা
বা বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন
বা বিদ্যুৎ ও বর্তমান সভ্যতা
ভূমিকা : সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের চরম উৎকর্ষে বিদ্যুতের ভূমিকা অপরিসীম। বিদ্যুতের অপরিমেয় শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই মানবজাতি সভ্যতার আজকের অবস্থানে এসে পৌছেছে। মানুষের বর্তমান জীবনব্যবস্থার এমন কোনাে দিক নেই যেখানে বিদ্যুতের ছোঁয়া লাগেনি। মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে যত বিষয় জড়িত, সববিষয়েই বিদ্যুৎ এমনভাবে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে যে, একটি মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ এটা ছাড়া ভাবতে পারে না। ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্প-কলকারখানা, চিকিৎসা, কৃষি, বিনােদন, সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্য এবং বিজ্ঞানের বহুবিধ অবদানের চালিকাশক্তি হিসেবে বিদ্যুৎ আজ মূল ভূমিকায় চলে এসেছে। এককথায় বিদ্যুতের অফুরন্ত শক্তি আর সম্ভাবনা বর্তমান সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের উৎকর্ষে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িয়ে পড়েছে।
বিদ্যুৎবিহীন পৃথিবী : বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পূর্বে পৃথিবীর অবস্থা ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং জীবনধারণের উপায় ও পদ্ধতি ছিল খুবই জটিল। নানা কুসংস্কার মানুষকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল বলে মানুষ উন্নতির দিকে যেতে পারছিল না। তাদের কৃষি, যােগাযােগ এবং দৈনন্দিন জীবনব্যবস্থা ছিল দুর্বিষহ। 
বিদ্যুৎসেবিত পৃথিবী : বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরে পৃথিবী যেন আলােয় ঝলমল করে উঠল। মানুষ খুঁজে পেল অগ্রগতির সঠিক বাহন। সবক্ষেত্রে পরিবর্তন সূচিত হলাে। এ পরিবর্তন উন্নয়নমুখী পরিবর্তন। মানুষের চিন্তা-চেতনায় ও জীবনযাপনের পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসল। মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে অনেক অসাধ্যকে সাধন করতে সক্ষম হলাে। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনাকে বশে আনা, কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানাের ব্যবস্থা এবং সেই সঙ্গে কায়িক শ্রমের সাশ্রয় সম্ভব হলাে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে। যােগাযােগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি মানুষের সময়কে বাঁচিয়ে দিল এবং দূরত্ব কমানাের মধ্য দিয়ে মানুষে মানুষে সম্প্রীতিভাব বাড়িয়ে দিল। মােটকথা বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরে পৃথিবী নতুন সাজে সজ্জিত হলাে। 
গৃহস্থালির প্রয়ােজনে বিদ্যুৎ : আজ বিদ্যুৎ মানবজীবনের নানা সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের নিপুণ কারিগর। বৈদ্যুতিক বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন সবই বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান। বিদ্যুতের সাহায্যে ঘরের কোণে আজ দূর-দূরান্তের পৃথিবীকে প্রত্যক্ষ করতে পারি, অনায়াসে তার সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারি। বিভিন্ন রােগ  ব্যাধিকে জয়ের কাজেও বিদ্যুৎ লাগিয়েছে তার আরােগ্যময় হাত। বিদ্যুৎ রাত্রির অন্ধকারকে আলােকিত করেছে, তাপদণ্ধ গ্রীষ্মের নিদারুণ অস্বস্তির অবসান ঘটিয়ে ঘােরাচ্ছে পাখা, চালাচ্ছে এয়ার-কুলার, বাসগৃহকে করেছে। শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত। রান্না বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি ও শিল্পে বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ আজ বিশ্বের উৎপাদনের ইতিহাসে এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। আজ কলকারখানায় দ্রুততর উৎপাদনের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে বিদ্যুতের কল্যাণেই। কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্রায়তন শিল্পগুলােতেও বিদ্যুতের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একে কাজে লাগিয়ে ছােট বড় অনেক কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এতে করে মানুষের একদিকে কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে মানুষ তার ভােগ্যপণ্যসহ অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছে। কৃষিকাজে বিদ্যুতের অবদান কম নয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারে কৃষিকাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কৃষিক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি সূচিত হয়েছে। 
সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিদ্যুতের অবদান : সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিদ্যুতের অবদান অপরিসীম। বিদ্যুতের দ্বারা আজ চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নতি সম্ভব হয়েছে। এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে দেহাভ্যন্তরের অবস্থা নিরুপণ করা সম্ভব। অনুমাননির্ভরতা থেকে বিদ্যুৎ চিকিৎসাবিজ্ঞানকে আজ মুক্তি দিয়েছে। তাছাড়া, বিদ্যুত্রশ্মির সাহায্যে ক্যান্সার প্রভৃতি দুরারােগ্য ব্যাধির চিকিৎসাও করা হচ্ছে বর্তমানে। লেসার-রে নিয়েছে আধুনিকতম শল্য-চিকিৎসার ভার। বিদ্যুৎ পরিবহণ ও যােগাযােগ সভ্যতার অন্যতম স্তম্ভ। পরিবহন ও যানবাহনের ইতিহাসে বিদ্যুতের অবদান বিস্ময়কর। বিদ্যুৎ স্থল, জল ও আকাশ পথে এনেছে। গতির উল্লাস। গগণচুম্বী অট্টালিকায়, 'লিফট' মানুষের ওঠা-নামাকে করেছে সহজসাধ্য, বন্দর-রেল স্টেশনে কপিকলে মাল ওঠানাে-নামানাে হয়েছে সহজসাধ্য। অন্যদিকে টেলিগ্রাম, টেলিফোন ও টেলিপ্রিন্টার, ই- মেইল বিশ্বের যােগাযােগব্যবস্থাকে যে দুততর করে তুলেছে তা তাে বিদ্যুতেরই অবদান। জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিন অতীত হয়েছে। আধুনিক যুগের বৈজ্ঞানিকগণ বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্যে পৃথিবীর খরস্রোতা নদীগুলােকে বন্দি করতে গিয়ে পেলেন অফুরন্ত জল-বিদ্যুতের সন্ধান, তা বিদ্যুৎ-উৎপাদনের ইতিহাসে সংযােজন করেছে এক নতুন অধ্যায়। বর্তমানে পরমাণু-বিদ্যুৎ উন্নত দেশগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহকে করেছে আরও সুবিধাজনক। মহাকাশ অভিযানেও বিদ্যুতের অবদান বিস্ময়কর। মহাকাশের হুবহু ছবি প্রেরণ, সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য সরবরাহ, পরিমিত তাপমাত্রা সংরক্ষণ, নির্ভুল দিকস্থিতি নির্ণয় প্রভৃতি বিদ্যুতের সাহায্যে সম্ভব হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা (NASA) সম্পূর্ণভাবে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিজ প্রযুক্তিনির্ভর । রােবট বিদ্যুৎ-এর সাহায্যে চলে। এ রােবটের সাহায্যে অনেক জটিল ও বিপজ্জনক কাজ সমাধা হয়ে থাকে। সাগর তলের রহস্য সন্ধানে রােবট মানুষের সঙ্গে অতন্দ্র প্রহরীর মতাে কাজ করে। পারমাণবিক শক্তিকে কাজে লাগানাে সম্ভব হয়েছে বিদ্যুৎ-এর সাহায্যেই। জিন প্রযুক্তিও বিদ্যুৎ-এর ওপর নির্ভরশীল। 
উপসংহার : সভ্যতার উৎকর্ষ সাধনে এমনকি অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে বিদ্যুতের কোনাে বিকল্প নেই। বিদ্যুতের সঠিক ও সর্বজনীন ব্যবহারের সুযােগ সৃষ্টি করে সভ্যতাকে আরও কয়েক ধাপ যেমন এগিয়ে নেওয়া যাবে তেমনি সকল মানুষ বিদ্যুতের দ্বারা উপকৃত হতে পারবে ।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment