SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা শ্রমের মর্যাদা বা, জাতীয় উন্নয়নে শ্রমের গুরুত্ব

ভূমিকা : যে কোনাে জাতির সার্বিক উন্নয়নে শ্রমের ভূমিকা অপরিসীম। মানবসভ্যতার ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় শুধু শ্রমে জয়জয়কার। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রম করে সে জাতি ততাে বেশি উন্নত। আমরা দৃষ্টিভঙ্গি একটু পরিবর্তন। করলেই দেখব জীব-জগতের সমস্ত প্রাণীই পরিশ্রমী। পরিশ্রমের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক ছােট ছােট জাতি উন্নতির স্বর্ণশিখরে পৌছে গেছে। 
কর্মের সুফল : সংসার নামক কর্মক্ষেত্রে নানা পেশার মানুষ নানা কাজে ব্যস্ত। উদয়াস্ত শ্রম বিলিয়ে মানুষ ঘরে ফেরে ঘর্মাক্ত হয়ে। এ অপমানের নয়, গৌরবের। এ দুঃখবােধের নয়, পরম প্রাপ্তির। কবির ভাষায়- 
'চাষি ক্ষেতে চালাইছে হাল, 
তাতি বসে তাঁত বােনে, জেলে ফেলে জাল, 
বহুদূর প্রসারিত এদের বিচিত্র কর্মভার।'
 কমই কর্মীর জীবনের শ্রেষ্ঠ সাধনা। কর্মের মধ্যেই তার ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। উদ্যোগী পুরুষ সিংহই নির্মাণ করে সুখ-সভ্যতা। পরিশ্রমই খুলে দেয় জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির সিংহদ্বার ।
শ্ৰমবিমুখতার পরিণাম : যারা অদৃষ্টবাদী, অলস, শ্রমবিমুখ তারা জীবনের প্রতি পদক্ষেপে হয় ব্যর্থ। স্রষ্টা কারও হাতে সম্পদ তুলে দেন না। কাপুরুষেরাই দৈবের দোহাই দিয়ে অলস জীবনাচারে ব্যাপৃত থাকে। ফলে দৈন্য, ব্যর্থতা ও পরাজয় হয় তাদের নিত্যসঙ্গী। সম্পদ কিংবা সাফল্য এমনি এমনিই হস্তগত হয় না, নিরলস শ্রম আর সংগ্রাম করে তা অর্জন করতে হয়। যে জাতি অলস, কর্মবিমুখ তারা শিক্ষা ও সভ্যতায় অগ্রসর নয়। উন্নয়নের সােনার হরিণ তাদের হাতে ধরা দেয় না কস্মিনকালেও। বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় যে দেশ ও জাতি উন্নয়ন ও অগ্রগতির সােপান রচনা করেছে তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে নিরন্তর শ্রমসাধনার ইতিহাস। আলস্যে কালক্ষেপণ করলে তাদের ইতিহাসও রচিত হতাে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির বদলে দারিদ্র্য ও ব্যর্থতার গ্লানিতে পূর্ণ হয়ে। চলমান বিশ্বে দ্রুতপদে এগিয়ে চলাই শ্রমের কাতারে যতই পা চলবে, প্রতি-পদক্ষেপে ততােই ফুটবে ফুল। তার সৌন্দর্য ও সৌরভে জীবন হবে সুন্দর।
শ্রমের রকমারি রূপ : গায়ে গতরে খাটা শ্রম, আর মানসিক শ্রম- দুটোরই  গুবুত্ব রয়েছে। যার যার যােগ্যতা অনুযায়ী মানুষ তার শ্রমের ক্ষেত্র ও মূল্যায়ন লাভ করে। শিক্ষিত লোেকরা সাধারণত মানসিক শ্রম করে থাকে। অন্যদিকে নিরক্ষরদের শ্রম হলাে প্রধানত কায়িক শ্রম। কায়িক শ্রম যারা করে তারা সমাজে শ্রেণিবৈষম্যের শিকার। তারা নিচুশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হয়। কিন্তু যারা মানসিক শ্রম করে তারা তুলনামূলকভাবে ভালাে অবস্থানে থাকে এবং সমাজের বিভিন্ন সুযােগসুবিধা গ্রহণ করে থাকে। কায়িক শ্রমকারী মানুষকে শ্রমিক বলা হয়। শ্রমিকশ্রেণির মানুষের শ্রমকে সমাজে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। অথচ উভয় প্রকার শ্রমেরই গুরুত্ব অপরিসীম। কোনাে শ্রমকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই শ্রমজীবী মানুষ উপেক্ষিত, এটা কাম্য হতে পারে না। শ্রমজীবী মানুষ অনেক বেশি কষ্ট করে। তারা রােদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তাদের কাজ করে। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমের বিনিময়েই সমাজ-সভ্যতার ভিত্তি রচিত হয় এবং তার বিকাশ ঘটে। জীবনের আরাম-আয়েশসহ ভােগবিলাসের পণ্যসামগ্রী শ্রমজীবী মানুষ উৎপন্ন করলেও তারা ভােগ করতে পারে না। তারা সচ্ছল জীবনের যাবতীয় উপাদানের উৎপাদনের নিয়ামক হয়েও নিজেরা অসচ্ছল থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে কায়িক শ্রম আর মানসিক শ্রম দুটোর কোনােটাই উপেক্ষার বিষয় নয় বরং দুটোরই সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা দরকার।
শ্রম ও লিঙ্গবৈষম্য : জগতে পুরুষ ও নারী উভয়েই স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখে জগৎকে সুন্দর করে গড়ে তুলছে। পুরুষের শারীরিক কাঠামাে আর নারীর শারীরিক কাঠামাের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই বেশকিছু পার্থক্য  বিদ্যমান। পুরুষ ও নারী তাদের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। নারীর কাজ বা শ্ৰম কোনাে অংশেই পুরুষের শ্রমের চেয়ে গুরুত্বহীন নয়। নারী তার শ্রমের দিগন্তে আপন মহিমায় উজ্জ্বল। কিন্তু অনগ্রসর দেশগুলােতে নারীর শ্রমকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ফলে নারী ও পুরুষের শ্রমের মধ্যে বিস্তর বৈষম্য বিরাজ করে বা শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্তরায়। নারী ও পুরুষের শ্রমের সমান মূল্যায়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত  হওয়া দরকার। আমাদের দেশে তৈরি পােশাকের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান অনেক। সে তুলনায় নারী শ্রমিকদের মূল্যায়ন করা হয় না। এটা অনভিপ্রেত। 
জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দক্ষকর্মীর হাতে পরিণত করতে পারলে তারা সমস্যা না হয়ে বরং শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। শতকোটি লােকের দেশ চীন তার বিপুল জনসংখ্যাকে পরিণত করেছে উন্নতির হাতিয়ারে। আমাদেরও হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী। উৎপাদন ও বণ্টনে মনােদৈহিক শ্রম নিবিড়ভাবে বিনিয়ােগ করতে পারলে ভােগের অধিকার আপনা থেকেই জন্মাবে। জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্বকে অস্বীকার করে আধুনিক সভ্য দুনিয়া গড়ে তােলা সম্ভব নয়। 
শ্রমই উন্নতির মূল : ব্যক্তিগত ও জাতীয় সকল উন্নয়নের মূলই হচ্ছে শ্রম ও কঠোর সাধনা। পরিশ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। বিশ্বে ক্রমেই শ্রমের গুরুত্ব ও মর্যাদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক এ বিশ্ব-ভাবনা থেকে আমরাও পিছিয়ে থাকতে পারি না। শ্রম বিনিয়ােগের সাথে সাথে আমাদেরও রচিত করতে হবে উন্নয়ন অগ্রগতির বিজয়রথ। 
উপসংহার : বৃক্ষ যেমন নীরব সাধনায় ফুল ফোটায়, ফল ফলায়, মানুষকেও তেমনি নিষ্ঠাবান কর্মের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতির উন্নয়নে ব্রতী হতে হবে। শ্রমের ফসলের সম্ভার নিয়েই ব্যক্তি, সমাজ ও দেশ এগিয়ে যায় উত্তরােত্তর সমৃদ্ধির সােনালি দিগন্তে। তাই নিশ্চিত করে একথা বলা যায়, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির নেপথ্যে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।


লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment