SkyIsTheLimit
Bookmark

মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার/কুফল রচনা


প্রারম্ভিকাঃ সাধারণত যে সব দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার বা পান করলে নেশা সৃষ্টি হয়, তাকেই বলা হয় মাদকদ্রব্য। আর এই মাদকদ্রব্যে আসক্ত হওয়াকে বলা হয় মাদকাসক্তি। মাদক দ্রব্যে যারা আসক্ত হন, তাদের বলা হয়। মাদকাসক্ত। মাদকাসক্তি' শব্দটি মূলত নিন্দার্থেই ব্যবহৃত হয়। মাদকাসক্তি ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক জীবনের স্বাভাবিকতাকে চরমভাবে ব্যাহত করে।

মাদকাসক্তির অতীত ও বর্তমানঃ মাদকদ্রব্যের প্রতি মানুষের আসক্তির ইতিহাস অতি প্রাচীন। সুদূর অতীত থেকে বিশ্বের সর্বত্রই ছিলাে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার। বিশেষ বিশেষ জনগােষ্ঠীর মধ্যে পূজা, বিবাহ ও নানা প্রকার ধর্মীয় উৎসবে মাদকদ্রব্য ব্যবহার প্রচলন ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে রােগের চিকিৎসা, শারীরিক শক্তি ও মানসিক প্রশান্তির জন্যেই মানুষ মাদক সেবন করতাে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা নেশার কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে। তখন থেকেই এটা এক ধরনের সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে। গত শতকের প্রমার্ধ পর্যন্ত মাদকাসক্তি ছিল ধনী দেশগুলাের সমস্যা। কিমত্ম ঐ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্থে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলাের ওপর মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। অনুন্নত দেশের ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষেত বেকার তথা তরুণ যুব সমাজের একটি বড় অংশ এখন আফিম, মর্ফিন, হেরােইন ও অন্যান্য মাদক দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বর্তমান বিশ্বে মাদকাসক্তি একটি ভয়াবহ সমস্যারূপে দেখা দিয়েছে। নেশা সৃষ্টির উপাদান হিসেবে মাদকদ্রব্যকে দুইভাগে বিভক্ত করা সম্ভব। যথা – ১. প্রাকৃতিক ২. রাসায়নিক।

ক. প্রাকৃতিকঃ  এ মাদকদ্রব্য প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপন্ন হয়। এ মাদকদ্রব্য গাছ থেকে উৎপন্ন হয়। যেমনঃ তাড়ি, আফিম, গাঁজা, ভাং, চরশ, মারিজুয়ানা প্রভৃতি।

খ. রাসায়নিকঃ পরীক্ষাগারে রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ায় এ মাদকদ্রব্য উৎপাদন হয়। এ মাদকদ্রব্য বেশি ক্ষতিকারক যেমনঃ হেরােইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন ও বিভিন্ন প্রকার এ্যালকোহল।

মাদকের উৎসঃ গােল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল, গােল্ডেন ক্রিসেন্ট, গােল্ডেন ওয়েজ মাদকের মূল উৎস। এ তিনটি সানে বিষবৃক্ষ পপি উৎপাদন করা হয়। কর্কটক্রান্তি রেখার ১৮০ হতে ২৪০ উত্তর দাক্ষেণাংশের মধ্যে গােল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল। এর পরিধি থাইল্যা-, বার্মা ও লাওস। উলেস্নখ্য যে, হেরােইনের মূল উৎস আফিম। (পপি গাছ)..............উৎপাদনের মাধ্যমেই আফিম পাওয়া যায়।

মাদকাসক্তদের সংখ্যাঃ ৩৬টি দেশ মাদকদ্রব্য উৎপাদন করলেও এর সানান্তর হয় শতাধিক দেশে। ডঐঙ এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের শতাধিক দেশের ৫০/৬০ কোটি মানুষ মাদক আসক্ত। চিকিৎসকদের তথ্য মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫০ লক্ষেরও অধিক।

মাদকদ্রব্যের ব্যবহারঃ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ কৃত্রিমভাবে নিজের প্রকৃতিকে অপ্রকৃতিস্করতে শিখেছে। চেয়েছে রুক্ষ বাস্তবতা, দারিদ্র-দহন থেকে পালিয়ে উদ্দাম কল্পনা আর ভ্রান্তিবিলাসে ঝুঁদ হয়ে থাকতে। নেশার জগতে ঘটেছে নানা রূপান্তর। এসেছে কোকেন, চরস, এল.এস.ডি, স্ম্যাক আর হেরােইন। এদের প্রত্যেকটির উপকরণ ও ক্রিয়া-বিক্রিয়া পূক। স্বল্প ও দীর্ঘসায়ী প্রভাবের ক্ষমতা আলাদা আলাদা।

মাদকদ্রব্যাদির প্রকৃতিঃ কার্যকারিতা ও প্রতিক্রিয়া অনুসারে বর্তমানে প্রচলিত মাদকদ্রব্যগুলােকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়; যথা-

(১) চেতনা ও বেদনা নাশক মাদক দ্রব্য।
(২) মনােদ্দীপক মাদকদ্রব্য।
(৩) অবসাদ সৃষ্টিকারী মাদকদ্রব্য।
(৪) স্নায়বিক উত্তেজনা নাশক মাদকদ্রব্য।
(৫) বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদকদ্রব্য।

মাদকাসক্তির কারণঃ বর্তমানে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাবলির মধ্যে মাদকাসক্তি অন্যতম। মাদকাসক্তি এখন মহামারীর মতাে দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। যুব সমাজ, এমনকি কিশােররা পর্যন্ত মাদকাসক্ত হয়ে জাতির জন্য দ্রুত সর্বনাশ ডেকে আনছে। আমাদের দেশে যুব সমাজের মধ্যে মাদকাসক্তি বিস্তারের অনেক কারণ আছে। যেমনঃ
(১) পারিবারিক কলহ কোন্দল, অশান্তি এবং নৈরাশ্য।
(২) দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বজনিত হতাশা।
(৩) মাদক এবং ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়া।
(৪) মাদকাসক্ত বন্ধুদের সংসর্গ।
(৫) নিছক কৌতূহলবশত মাদকদ্রব্য গ্রহণ।

মাদকাসক্তের সর্বনাশা দিকঃ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে মাদকাসক্তির পরিণাম খুব ভয়াবহ। নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য নানারকম কুকর্মের আশ্রয় নিচ্ছে মাদকাসক্তরা। লেখাপড়ার প্রতি মনােযােগ হারিয়ে নিজেকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে মাদক নেশায় আসক্ত যুবক ও কিশােররা। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজিতে অভ্যস্ত হয়ে তরুণসমাজ আজ। অপরাধের অন্ধকার জগতের নিশাচর হয়েছে। এদের পারিবারিক জীবনে নেমে আসছে বিপর্যয়। অভিভাবকেরা সন্তানের অশুভ পরিণতি দেখে কপালে করাঘাত করছেন। জাতি প্রত্যক্ষ করছে এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ আর | অনিশ্চিত উত্তরাধিকার।

প্রতিকারঃ পাশ্চাত্য সভ্যতা নামক বিষবৃক্ষের বিষফল মাদকাসক্তির সর্ববিধ্বংসী রূপ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। বিবেকবানরা এর প্রতিকার প্রতিরােধের সম্ভাব্য সকল ব্যবসা গ্রহণের নিত্য নতুন পমার কথা চিন্তাভাবনা করছেন মাদকাসক্তদের জন্য খােলা হয়েছে 'এ্যান্টিড্রাগ সেল'। প্রণীত হয়েছে সকল প্রকার মাদকদ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত কঠোর আইন। 'ড্রাগ থেরাপি ও সাইকোথেরাপির মাধ্যমে মাদকাসক্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।

উপসংহারঃ মাদক এখন সমগ্র মানবজাতির সামনে এক সমূহ সর্বনাশের সঙ্কেত। জাতিকে যারা নেশার মাধ্যমে চিরপঙ্গু করে দিতে চাইছে; চাইছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধকারে বিলীন করে দিতে, তাদের ক্ষমা নেই। মাদকের এ সর্বগ্রাসী সমস্যাকে মােকাবেলা করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে; সবাইকেই শামিল হতে হবে এই নেশাযুদ্ধের বিরুদ্ধে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment