SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বাংলাদেশের পােশাকশিল্প


অর্থনৈতিক উন্নয়নে পােশাকশিল্পের অবদান
ভূমিকা: বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পােশাকশিল্পের নাম সর্বাগ্রে উল্লেখযােগ্য। বাংলাদেশের পােশাকশিল্প বিশ্বমানের। আমাদের পােশাকশিল্পের একশ ভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। অতীতে পােশাকশিল্পের অবস্থা: সরকারি পৃষ্ঠপােষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পােশাক বা বস্ত্রশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সমগ্র পাকিস্তানে ১৪০টি কাপড়ের মিল ছিল। যার মধ্যে শুধু ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান বা বর্তমান বাংলাদেশের। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাপড়ের বাজারে পরিণত করাই ছিল বৈষম্যের জালে জড়ানাে সরকারি নীতি।
বর্তমান অবস্থা: স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পােশাকশিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কাপড়ের কলের সংখ্যা ৬৯টি, যাতে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়ােজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% মহিলা। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় পােশাকশিল্পের প্রধান কেন্দ্রগুলাে অবস্থিত আর্দ্র জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যােগাযােগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়ােজনীয় মূলধনের প্রতুলতা পােশাক শিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালিগঞ্জ এবং গােয়ালন্দে কাপড়ের কল রয়েছে। এ ছাড়া তাঁতশিল্পও বেশ খ্যাতি লাভ করেছে।
পােশাকশিল্পের প্রয়ােজনীয়তা: মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলাের মধ্যে অন্যতম চাহিদা বস্ত্রের চাহিদা। বাংলাদেশে জনসংখ্যার হারে বার্ষিক কাপড়ের প্রয়ােজন প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মিটার। এছাড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের সিংহভাগই আসে পােশাকশিল্প থেকে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইউরােপের অন্যান্য দেশ, জাপান এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলােতেও বাংলাদেশের পােশাকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই জাতীয় আয় বৃদ্ধ এবং নিজ চাহিদা পূরণার্থে পােশাকশিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। পােশাকশিল্প থেকে
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পােশাকশিল্পের অবদান 
ক. পােশাকশিল্প থেকে রপ্তানি আয়: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পােশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযােগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ৭৬% আসে পােশাকশিল্প থেকে। 
খ. দ্রুত শিল্পায়নে অবদান: পােশাকশিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, প্রিন্টিং শিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তাই নয় প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বােতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই। ডাইং ফিনিশিং, এর 
গ. বেকারসমস্যা সমাধানে অবদান: পােশাকশিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযােগ করে দিয়েছে এ শিল্প। পনেরাে লক্ষেরও বেশি মহিলা শ্রমিক এ শিল্পে কাজ করে জীবনধারণ করছে। মহিলাদের যােগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে এ শিল্পে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়ােগ করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। 
ঘ. অন্যান্য অবদান: এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্য পরিবহণ সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযােগ লাভ করেছে। এ শিল্পে বিনিয়ােগ করে ব্যাংকগুলাে লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানির প্রিমিয়াম বাড়ছে। 
রপ্তানিকারক দেশসমূহ: বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পােশাক রপ্তানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এর পর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশ। 
পােশাকশিল্পের বাধা: বাংলাদেশের পােশাকশিল্পের জন্যে সবচেয়ে বড় বাধাগুলাে নিম্নরূপ: 
ঙ.  অস্থিতিশীল রাজনীতি: দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পােশাকশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতাে ও সময়মতাে উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসাত্মক কার্যাবলির জন্য চুক্তি অনুযায়ী সময়মতাে কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজ নিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয় ‌। 
চ. কাঁচামাল সমস্যা: কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি সমস্যা। দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানিকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পােশাক বিদোশ ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযােগ্যতা হারিয়ে ফেলে। 
ছ.  দক্ষ শ্রমিকের অভাব: পােশাকশিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড় সমস্যা। এ শিল্পের সিভাগ শ্রমিকই নারী। নারীদের প্রশিক্ষাণের উ ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ নারী শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। দক্ষ পুরুষ শ্রমিকেরও অভাব রয়েছে। 
জ.  কোটা আরােপ: যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৫ সালে পােশাক আমদানির ক্ষেত্রে কোটা আরােপ করলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্প্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া শুল্ক জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি। এসব কারণগুলাে এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তবে বর্তমানে কোটা তুলে নেয়া হয়েছে। 
সমস্যা সমাধানে করণীয়: নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পােশাকশিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে- 
ক. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। 
খ.  দুত রপ্তানির জন্য কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান। 
গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। 
ঘ. প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ। 
ঙ. সব পর্যায়ে দুর্নীতির অবসান। 
চ. ইপিজেড-এর মতাে সুযােগ-সুবিধা প্রদান। 
ছ.  ন্যূনতম মজুরী ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। 
জ. গার্মেন্টস শ্রমিকদের থাকার জন্য গার্মেন্টস পল্লি নির্মাণ করা 
ঝ. শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 
উপসংহার: পােশাকশিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে এ শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পােশাকশিল্প ইতােমধ্যে দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি কুড়িয়েছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং বস্ত্রকলের পাশাপাশি তাঁত শিল্পের ঐতিহ্য, গুরুত্ব ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment