SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা জনসংখ্যা ও জনশক্তি

ভূমিকা :
বিশ্বের জনসংখ্যা সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ জনসংখ্যার হার অনুন্নত দেশেই দ্রুত বাড়ছে। বাংলাদেশের মতাে উন্নয়নশীল দেশে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অষীকার করা যায় না যে, একটি রাষ্ট্রের অপরিহার্য উপাদান জনগােষ্ঠী এবং রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীণ উন্নতির জন্য জনসম্পদের কোনাে বিকল্প নেই। জনসংখ্যা যদি মেধা ও শ্রমে, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার উৎপাদনশীল জনসম্পদে পরিণত না হয় তা হলে বর্ধিত মানুষ হয়ে পড়ে দেশ ও সমাজের বােঝ। দেশের উন্নতির জন্য জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা অত্যাবশ্যক।
জনসংখ্যা ও জনশক্তি : জনসংখ্যার আধিক্য একটি দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ১৯৭১ সালে এদেশের লােকসংখ্যা ছিল প্রায় ৭.৫ কোটি। ২০০৫ সালে তা এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩.১০ কোটিতে। বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৪৮%। আমাদের দেশের আয়তন বাড়েনি। সম্পদও অপ্রতুল। তাই এ বর্ধিত জনসংখ্যা আমাদের জাতীয় জীবনের অগ্রগতিকে ব্যাহক করছে। আমাদের দেশে বহু শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকার লােক রয়েছে। এ বকার জনগােষ্ঠী জাতীয় জীবনে বােঝা হয়ে আছে। জনসংখ্যার বেকার অংশকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারলে দেশের এক বিরাট সমস্যার সমাধান হবে।
জসংখ্যাধিক্য কী : দেশের সম্পদের তুলনায় যদি জনসংখ্যা বেশি হয় তাহলেই সে দেশকে অধিক জনসংখ্যার দেশ বলা হয়। ঘনবসতি কিংবা প্রচুর জনসংখ্যা থাকলেই যে জনসংখ্যাধিক্যজনিত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে একথা বলা যায় না। জনসংখ্যাধিক্য তখনই বলা যায়, যখন সম্পদের বন্টন শেষে মাথাপিছু আয় হ্রাস পায়, জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যায়। বেকারত্ব ও দারিদ্র গ্রাস করে। বর্তমানে আমাদের দেশ অধিক জনসংখ্যার চাপে পিষ্ট। কিন্তু এ জনসংখ্যাকে যদি নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ ও উপর্জনক্ষম করে তােলা যায় তাহলে তা ভারসাম্য রক্ষা করবে এবং এ জনসংখ্যাই সম্পদে পরিণত হবে। আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিতে যে পরিমাণ শ্রমিক দরকার, তার চেয়ে বেশি শ্রমিক আমাদের আছে। তাই গ্রামাঞ্চলে বেকারের সংখ্যা অনেক। দেশে কল-কারখানা যা গড়ে উঠেছে, তা প্রয়ােজনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া আমাদের দেশের বেকার যুবকরা। বৃত্তিমূলক কোনাে বিষয়েই দক্ষ নয়। তাই তাদের কর্মসংস্থানের হচ্ছে না।
জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করার উপায় : আমাদের দেশের বেকার শিক্ষিত ও অশিক্ষিত যুবকদের জনশক্তিতে রূপান্তর করা কঠিন কাজ নয়। শুধু পরিকল্পনা ও সদিচ্ছার অভাবে আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ যুবক আজ বেকার জীবনযাপন করছে। বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা আছে। আমাদের দেশেও নানা রকম প্রকল্প চালু করে জনগণকে কাছে লাগানাে যেতে পারে। শুধু স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে জীবন চালানাে বা চাকরি পাওয়া দুষ্কর। আমাদের বিপুল জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রুপান্তর করতে হলে কতকগুলাে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ পদক্ষেপ সরকারি ও বেসরকারি উভয় পক্ষ থেকেই নিতে হবে। কারিগরি শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করতে হবে। সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি ছাড়া আর কিছু রতে হবে। সাধ করার উপায় থাকে না। কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করলে দেশে ও বিদেশে উভয় স্থানেই জনশক্তির চাহিদা থাকবে। আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তির সাথে আমাদের যুবকদের পরিচিত করাতে হবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে তুলতে পারলেই সম্পদ তৈরি সহজতর হবে। 
জনসংখ্যা ও জনশক্তির মূল্যায়ন : কর্মদক্ষ মানুষ একটি দেশের সম্পদ। দেশের সমস্ত মানুষ জনসংখ্যার অন্তর্ভূক্ত কিন্তু জনশক্তি তারাই যারা উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে। দেশের অদক্ষ ও কর্মহীন জনগােষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে জাতীয় আয় বাড়বে, বেকারত্ব দূর হবে এবং অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বেকারত্বের ফলে আমাদের দেশে অস্থিরতা, বাড়ছে, নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছে। সন্ত্রাস, ছিনতাই রাহাজানি আজ আমাদের দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। জনসংখ্যার বৃহৎ অংশের কোন কাজ নেই, কাজ করার দক্ষতা নেই। বর্তমান বৈজ্ঞানিক বিশ্বে নানা বিষয়ে দক্ষতা দরকার। পুঁথিগত বিদ্যা পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য যথেষ্ট নয, দরকার কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। জনসংখ্যার অধিক হার আমাদের কাছে আজ বিপজ্জনক মনে হয়, অথচ এ জনসংখ্যাকে যদি মাবনসম্পদে রুপান্তর করা যায় তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে, দেশ থেকে দারিদ্র্য দূর হবে, সমাজজীবনে স্বস্তি নেমে আসবে। আমাদের দেশের বহু সংখ্যক লােক বিদেশে গিয়ে মানবসম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে এবং তারা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। 
জনশক্তি সৃষ্টিতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ : সরকার দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তােলার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান ও বৈদেশিক চাকরি লাভে সহায়তার লক্ষ্যে গড়ে তােলা হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। দেশের প্রতিটি জেলাতেই এ অধিদপ্তরের শাখা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। অনুমােদন দেওয়া হয়েছে ভােকেশনাল স্কুল ও কলেজ। বিশেষ। করে বিদ্যমান স্কুলগুলােতে ভােকেশনাল শাখা চালু করা হয়েছে। নীট, নট্রামসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সরকারের সহায়তায়। িার জানসম্পন্ন জনশক্তি গড়ে তুলছে। সরকার আত্মকর্মসংস্থানের সহজ শর্তে ঋণদান নিশ্চিত করেছে। ফিশারিজ, পােন্ট্রি ও ডেইরি এবং খাদ্র প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের নেওয়া হয়েছে ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিজিএমএ ও পর্যটন কর্পোরেশন নব নব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে‌। 
উপসংহার : জনসংখ্যা ও জনশক্তি যেকোনাে দেশের জন্য প্রাণসরূপ। তবে সম্পদ ও আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে তা দেশের জন্য অকল্যাণই বয়ে আনে। সে হিসেবে বাংলাদেশের বর্ধিত জনসংখ্যাকে দেশের জন্য মঙ্গলজনক বলা যায় না। তাই প্রয়ােজন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। তবে দেশের বর্ধিত বেকার জনসংখ্যাকে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে তারা স্বাবলম্বি হতে পারবে। তাই জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করে আমাদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা হলাে, বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে অধিক গুরুত্বারােপ করেছে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment