SkyIsTheLimit
Bookmark

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা

দ্রব্যমূল্যের উধ্বগতি
বা দ্রব্যমূল্য ও বাংলাদেশ

ভূমিকা : বেঁচে থাকার জন্য মানুষের নানাবিধ দ্রব্য ও উপকরণ প্রয়োজন হয়। এসব দ্রব্য বা উপকরণের সবগুলাে সে নিজে তৈরি করতে পারে না। জীবনধারণের অধিকাংশ দ্রব্যই তাকে মূল্য পরিশােধের মাধ্যমে অর্জন করতে হয় এবং এ মূল্য পরিশােধের উপরই তার দ্রব্য প্রাপ্তির পরিমাণ নির্ভর করে। মূল্যস্তর ঠিক থাকলে সে দ্রব্যটি তার আয়ের টাকায় সংগ্রহ করে জীবনধারণ নিশ্চিত করতে পারে। দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়, সংসার চালানাে তখন কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিবছরই বিভিন্ন কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। নিম্নে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নানাবিধ কারণের উপর আলােকপাত করা হল ।

মূল্যবৃদ্ধির কারণ : বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এখন আর কোন বিশেষ খবর নয়। এটা অনেকটা নিত্য সত্যের মতই। মূল্যবৃদ্ধি নানা কারণে ঘটে। বর্তমানে বিশ্ব বাজারে জিনিসপত্র চলাচলের ব্যবস্থা সহজ হলেও জটিলতামুক্ত পণ্য বাজার তৈরি হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কতকগুলাে অনিবার্য কারণ হল মুদ্রাস্ফীতি, চোরাকারবার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, উৎপাদন হ্রাস, খরা, বন্যা ইত্যাদির প্রভাব, অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজি, সরকারের উদাসীনতা এবং দ্রব্যে করারােপ ইত্যাদি। উপরােক্ত কারণগুলাের ফলে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীলতা হারিয়ে ফেলে।

মুদ্রাস্ফীতি : দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বিভিন্ন দেশের টাকার মূল্যমানের সাথে দেশীয় মুদ্রার একটা হার নির্ধারণ করা হয়। কোন কারণে দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিলে মুদ্রার মূল্যমান উঠানামা করে। দেশে সম্পদের তুলনায় বা ব্যাংক রিজার্ভের তুলনায় অধিক মুদ্রা বাজারে ছাড়লেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। তখন বিদেশী টাকার মূল্য ঠিক থাকে কিন্তু দেশীয় মুদ্রার মূল্য কমে যায়। ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

চোরাকারবার : দেশের অভ্যন্তরে যে সম্পদ আছে তা, একটা নিয়ম অনুযায়ী রফতানি হয়। আর বিদেশ থেকেও নির্দিষ্ট কোটা অনুযায়ী দ্রব্য আমদানি করা হয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা চোরাপথে এসব দ্রব্য আমদানি করলে দ্রব্যমূল্য কমে যায় আবার চোরাপথে দেশী দ্রব্য বিদেশে পাচার করলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

জনসংখ্যা বৃদ্ধি : অধিকহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। তখন অধিক লােকের চাহিদা অল্প দ্রব্যে মিটাতে হয়। সুতরাং, ব্যবসায়ীরা এ সুযােগ গ্রহণ করে এবং ইচ্ছামতাে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। দ্রব্য ঘাটতির সুযােগেও মূল্য বৃদ্ধি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়।

উৎপাদন হ্রাস : কোন কারণে দেশে উৎপাদন ব্যাহত হলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। প্রয়ােজনীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে না পারলে জমিতে ফসল উৎপাদন কম হয়। এভাবে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির চাহিদার চেয়ে যােগান কম হওয়ায় দ্রব্যমূল্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।

খরা, বন্যা ইত্যাদির প্রভাব : শুকনাে মৌসুমে খরা এবং বর্ষার সময় বন্যার ফলে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকে না। ফসল কম হওয়ার ফলে চাহিদা মিটানাে ও সমভব হয় না। এতে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

অসৎ ব্যবসায়ীদের কারসাজি : অসৎ ব্যবসায়িগণ দব্য গদামজাত করে কত্রিম সংকট তৈরি করে যার ফলে প্রবে্যের আপাত ঘাটতি দেখা দেয় এবং স্বাভাবিক কারণেই দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। বাজেট তৈরির সময়ও অনেক সময় সম্ভাব্য পরিবর্তন লক্ষ্য করে ব্যবসায়ীরা দ্রব্য ধরে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং পরে তা উচ্চ দামে বিক্রি করে।

সরকারের উদাসীনতা : সরকার ইচ্ছে করলে কঠোর অধ্যাদেশ জারি করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে উদাসীনতার সুযােগে ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়িয়ে দেয়।

করারােপ : কোন দ্রব্যে নতুন কর ধার্য করলে সে দ্রব্যের দাম স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। আমাদের মত অনুন্নত দেশে পারে। কিন্তু সরকারের করারােপ না করে অর্থনীতির আন্তর্জাতিক ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন। তাই বাধ্য হয়ে সরকার করারােপ করেন, ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিকার : নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসমূহ জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার ভেতরে রাখা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু তা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। দ্রব্যের মূল্য একবার বেড়ে গেলে তা কমানাে খুবই কঠিন। তাই মূল্য যাতে না বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দেয়া সরকারের দায়িত্ব। দ্রব্যমূল্য কমানাে বা স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে সরকারকে অভ্যন্তরীণ কঠোর নীতি ও আমদানি ও রফতানির ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। মজুতদারি নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়ােজনে নতুন আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একচেটিয়া বাজারকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিযােগিতামূলক বাজার সৃষ্টি করতে হবে। এতে দ্রব্যমূল্য বাড়ানাের অবকাশ থাকবে না। এছাড়া মুদ্রাস্ফীতি, চোরাকারবার, মজুতদারি ইত্যাদি ব্যাপারে সজাগ থাকলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রােধ করা সম্ভব হবে।

উপসংহার : প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য স্থিতিশীল রাখা আমাদের মত দরিদ্র দেশের জন্যে অতীব প্রয়ােজন। অনেক সময় সরকার ভর্তুকি প্রদান করে বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে প্রয়াস পায়। তবে দ্রব্যমূল্যকে স্থিতিশীল রাখার কার্যকর পন্থা হল চোরাচালানি, মজুতদারি রােধ করা এবং কঠোর হস্তে আইন প্রয়ােগ করা‌।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment