SkyIsTheLimit
Bookmark

দুই হাজার সালের পৃথিবী রচনা

একুশ শতকের প্রত্যাশা

ভূমিকা : ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১মিনিটে সৌর বিশ্বের অন্যতম প্রাণধারণকারী গ্রহ পৃথিবী প্রবেশ করে ২০০০ সালে বা ২১ শতকে। দুই হাজার সাল বা ২১ শতককে বরণ করার জন্য পৃথিবীর সব জাতি মেতে উঠে উৎসবে। ২১ শতক আসছে বিংশ শতাব্দীর ব্যর্থতা ফেলে এবং স্বপ্ন সফলতা নিয়ে আগামী বিশ্বকে নতুন করে গড়ে তােলার প্রতিশ্রতিতে।

ফেলে আসা বিংশ শতাব্দী : বিংশ শতাব্দীর ক্রান্তিলগ্নে মানুষ মহাশূন্যে আরেক বিশ্বের অনুসন্ধানে নিয়ােজিত হয়েছে। গ্রহ গ্রহান্তর মানুষের নাগালের সীমায়। অনেক আগেই মহাসমুদ্রের তলদেশ এবং সুউচ্চ এভারেস্ট শৃঙ্গ মানুষ জয় করেছে। মঙ্গল গ্রহে মনুষ্য বসতি গড়ে তােলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র মঙ্গল বা চাদ নয়, গ্রহ জগতের অপরাপর গ্রহ, উপগ্রহসমূহে মানুষ তার অগ্রযাত্রাকে প্রসারিত করবে।

বিংশ শতাব্দীর যুদ্ধময় বিশ্ব : পৃথিবীর মানুষ মানবিকতার মূল্য দেয়। তাই বিবেকবান মানুষ একই কণ্ঠে শ্লোগান তােলে 'যুদ্ধ নয় শান্তি চাই। কিন্তু বিশ্বের পরাশক্তিগুলাে শান্তির কপােতকে হত্যা করেছে। স্বার্থের সূক্ষ্মতায় বাঁধা পড়েছে, বিশ্বের শান্তি। যেদিকে তাকানাে যায় সেদিকে উনিশ শতকের ফরাসি বিপ্লব, রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে পাওয়া মানবতাবাদ ভূলুষ্ঠিত। জাতিগত দাঙ্গা, সাম্রাজ্যবাদের লেলিহানতায় পুড়ছে বিশ্ববিবেক। বিংশ শতাব্দীর প্রথমেই সংঘটিত হয়েছিল প্রথম মহাযুদ্ধ এবং মাঝামাঝিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। দুই মহাযুদ্ধেই নিহত এবং আহত হয়েছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ।

আণবিক শক্তির সফলতা : আণবিক শক্তির বিকৃত চর্চা দ্বারা কুফল বয়ে আনলেও এ দ্বারা সফলতা বয়ে আনা সম্ভব। পৃথিবীর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বিজ্ঞানীগণ আণবিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করেছেন। কারণ বিদ্যুতের চেয়ে আণবিক শক্তির ক্ষমতা বেশি। আণবিক শক্তির দ্বারা ক্যানারের মত দুরারােগ্য ব্যাধি নিরাময় করা সম্ভব আগামী ২১ শতকে আণবিক শক্তিকে আরাে সফলতার পথে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বকে।

যােগাযােগ ব্যবস্থা : আদিকালে প্রথমে আগুন আবিষ্কার এবং পরে চাকা আবিষ্কার সভ্যতাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। আজ থেকে একশ বছর পূর্বে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তের খবরাখবর পৌছানাে ছিল সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মানুষের অবস্থান আজ সারা বিশ্বকেন্দ্রিক। মানুষ তাই আজ ভূখণ্ডগত সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ নয়, সে বিশ্ব নাগরিক টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট দ্বারা মানুষের যােগাযােগ ব্যবস্থাটি হয়েছে মুহূর্তকেন্দ্রিক।

চিকিৎসা বিজ্ঞান : উনবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীতে এমন কিছু রোগ ছিল যেমন- কলেরা, বসন্ত , ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা যা একান্তভাবেই চিহ্নিত করেছিল প্রাণসংহারী রােগ হিসেবে। মানুষের পক্ষে এ রােগ জয় করা সম্ভব হয়েছে। এখন এ রােগ টিকা ও অন্যান্য প্রতিষেধকের প্রভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে নির্মূল হয়েছে। ক্যান্সার ও জটিল হৃদরােগ মানুষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। হৃদপিণ্ড সংস্থাপন এবং কেমােথেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার রােগ প্রতিরােধ করা সম্ভব হয়েছে। মানুষের পক্ষে জয় করা সম্ভব হয় নি এইডস নামক ঘাতক ব্যাধিটি। হয়তাে ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং বিজ্ঞানীদের নিরলস চেষ্টা দ্বারা এইডস একবিংশ শতাব্দীতে আগ্রাসন গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে।

মহাকাশ বিজ্ঞান : মধ্যযুগে কলম্বাস বা ভাস্কো-দা-গামা নতুন বিশ্বের জলপথ আবিষ্কার করেন। বিংশ শতাব্দীতে ইউরি গ্যাগ্যারিন প্রথম মানব হিসেবে মহাকাশে যাওয়া, চাদের পাহাড়ে পৃথিবীর পতাকা স্থাপন, কিংবা সােজার্নারের মজলগ্রহে তথ্যানুসন্ধান সবই মানুষের সাহসী অগ্রযাত্রার নির্দেশক। মহাশূন্যে মানুষের যে অভাবিত সাফল্য তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন নতুন মহাযান প্রেরণের মধ্য দিয়ে। দূর গ্রহগুলােতে মানুষের তৈরি মহাযানগুলাে ছুটে চলছে। পৃথিবীর মানুষ নতুন নতুন তথ্য লাভ করেছে।

একবিংশ শতাব্দী এবং বিশ্ব চিন্তাবিদ: মানুষ সব সময় আগামীকে প্রত্যাশা করতে পছন্দ করে। আগামী শতক নিয়ে চিন্তিত হয়েছেন বিশ্বের চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ। বিশ্বের বিজ্ঞানের অভাবিত সাফল্য তুলে ধরে বিজ্ঞানীরা আগামী একশ বছর নিয়ে নানা কল্পকাহিনী তৈরি করেছেন। তবে এ কল্পনার পশ্চাতে অবশ্যই যুক্তিগ্রাহ্যতার অবস্থান রয়েছে। তাই এ যুগ চিহ্নিত হয়েছে Age of reason

সম্ভাবনাময় আগামী বিশ্ব : কয়েক মাস পূর্বে শুরু হওয়া দুই হাজার সাল বা ২১ শতকে বিশ্ব আরও নতুন কিছু প্রার্থনা করে বিশ্ববাসীর কাছে। বিশ্ব যুদ্ধ চায় না। তেমনি চায় না পারমাণবিক শক্তির বিবেচনাহীন ব্যবহার। এ ব্যবহার রােধ করা না হলে যে কোন মুহূর্তে পৃথিবী ধ্বংসস্তৃপে পরিণত হতে পারে। যার ফল মহাবিশ্বের একমাত্র প্রাণ ধারণকারী গ্রহ পৃথিবীর সভ্যতা চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে আত্মহননের পথ থেকে সরে আসতে হবে।

পরিবেশ এবং আগামী বিশ্ব : শিল্পোন্নত দেশগুলাের দ্বারা বিশ্বের ৮০ ভাগ পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি ও আবাসনের জন্য সবুজ সম্পদের পরিমাণ আশংঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। আগামী শতকের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে বিশ্ববাসীকে আরাে এগিয়ে আসতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে সুস্থ পরিবেশ হত্যাকারী সমস্ত নিয়ামকসমূহ।

এক বিশ্ব, এক জাতি, এক পরিবার ব্যবস্থা : পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থেই বলা হয়েছে আদি পিতা এবং আদি মাতা সব মানব সন্তানের জন্মদাতা। কিন্তু স্বার্থের সংকীর্ণতায় মানুষ আজ জাতি, বর্ণ, গােত্র দ্বারা বিভক্ত। সব বিভেদ ভুলে এক জাতি, এক বিশ্ব গড়ে তােলার জন্য সব জাতিকে এগিয়ে আসতে হবে।

উপসংহার : একবিংশ শতাব্দীতে হয়তো রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে না। কিন্তু পরিবর্তনটা আনতেই হবে। বিশ্বের যেখানে যেখানে মানবিকতা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, সেখানে মানবতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। জাতিসংঘের কাছে বিশ্ববাসীর প্রার্থনা অনেক। জাতিসংঘকে বৃহৎ শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, আর চাই সারা বিশ্বের প্রত্যেক মানুষের সমৃদ্ধি হােক আগামী বিশ্বের প্রতি বিশ্ববাসীর কামনা।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment