SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা আধুনিক জীবনে কম্পিউটার

বিংশ শতাব্দীর বিস্ময় কম্পিউটার 
বা, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তিতে কম্পিউটার
বা, আধুনিক জীবনে কম্পিউটারের ভূমিকা 
বা,  কম্পিউটার ও আধুনিক বিশ্ব
ভূমিকা : সাধারণভাবে যে কোনও গণক যন্ত্রকে কম্পিউটার বলা যেতে পারে। তবে সাম্প্রতিককালে এর সংজ্ঞা আরও সুনির্দিষ্ট ও ধরাবাধা। আজকের দিনে কম্পিউটার বলতে বােঝান হয়, ইলেকট্রনিক্স নির্ভর এমন একটি তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থাকে যার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় এবং যে ব্যবস্থা বিভিন্ন তথ্য ও নির্দেশ গ্রহণ ও সংরক্ষণ করে অতি দ্রুত বহু জটিল সমস্যা নিখুঁতভাবে সমাধানে সাহায্য করতে পারে। কম্পিউটারে ফ্রেইম এর উপর সুইচ ও বাল্ব অথবা ট্রানজিস্টার অথবা ইনটিগ্রেটেড সারকিট ইত্যাদির সমাবেশ থাকে। ফেইম এর বিভিন্ন অংশের মধ্যে টেপ ইত্যাদি। এ অংশগুলোকে তার দিয়ে সংযুক্ত করে যে গণনামূলক একটি ব্যবস্থা গড়ে তােলা হয়, সংক্ষেপে তারই নাম হল- কম্পিউটার ‌।
কার্যক্রম : কম্পিউটার সাধারণ যােগ বিয়ােগ থেকে শুরু করে এমন সব জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারে, যেগুলাে এমনিতে করতে হাজার হাজার স্টেপ বা ধাপ অঙ্ক কষতে হয়। কম্পিউটার জটিল কোন গণনা বা হিসাবকে কোনরূপ ভুলভ্রান্তি ছাড়াই লক্ষ লক্ষ বার একই রকমভাবে উপস্থাপিত করার ক্ষমতা রাখে। এরা নির্দেশ অনুযায়ী বই ছেপে দিতে পারে, চিঠি লিখতে পারে, হব বা গ্রাফ আঁকতে পারে। এ ছাড়া পারে বিভিন্ন তথ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে সাজাতে, ফাইল । খুঁজতে, বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে করতে এবং সর্বোপরি যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে। তবে কম্পিউটারের নিজস্ব কোন চিন্তাশক্তি নেই। তাকে যা কিছু নির্দেশ দেওয়া হয় তার বাইরে সে কিছুই করতে পারে না। কম্পিউটারকে কাজ করার জন্য বিভিন্ন নির্দেশ বা বিবৃতি এমনভাবে দিয়ে থাকেন তাকে বলা হয় প্রােগ্রামার। এসব নির্দেশ বা বিবৃতি এমনভাবে কম্পিউটারের কাছে উপস্থাপিত করা হয়, যাতে তার পক্ষে সেগুলাের তাৎপর্য উদ্ধার করা সম্ভবপর হয়। এদের উপর নির্ভর করেই সমস্যা-সমাধানের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ধাপে ধাপে এগিয়ে যায়। নির্দেশ সমন্বিত এসব বিবৃতির নাম প্রােগ্রাম। কম্পিউটারের আসল কাজকর্মের সবটিই এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। অপরদিকে, ডিজিটাল কম্পিউটাররা ()' ডেইট্যা মজুতের ব্যাপারে বিশেষ পারঙ্গম, (২) যুক্তিনির্ভর ব্রিয়াকর্মে দক্ষ, (৩) সরবরাহ করা ডেইটাকে সম্পাদনা ও পরিমার্জনে সক্ষম এবং (৪) অতি দ্রুত তাকে দেওয়া তথ্যগুলাের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত বা ফলাফল জানাতে সমর্থ। ডিজিট্যাল কম্পিউটারের একটি বিশেষ সুবিধে হল, এর সাহায্যে এর নিয়ন্ত্রক বা পরিচালক তার অভিরুচি অনুযায়ী সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসাব বা ফলাফল পেতে পারেন। তবে এর প্রধান অসুবিধে এই যে, এটি নির্মাণ করা প্রভূত ব্যয়সাপেক্ষ এবং এর প্রােগ্রামিং ব্যাপারটিও যথেষ্ট জটিল।
জেনারেশন কম্পিউটার : কম্পিউটার কোনও ব্যক্তিবিশেষের আবিষ্কার নয়; বিগত দেড়শাে বছর ধরে বহু মানুষের অসংখ্য আবিষ্কার ও ভাবনা-চিন্তার ফলশ্রতি এতে আছে। এদের মধ্যে সর্বাগ্রে স্মরণীয় চার্লস ব্যাবেজের নাম। তিনি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রীজে একটি অটোমেটিক মেকানিক্যাল ক্যালকুলেটার’ গড়ার জন্যে সচেষ্ট হন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চেপে চাপ দেওয়া বা ছিদ্র করার স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রাদি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে চালু হয়।
সেকেণ্ড জেনারেশন কম্পিউটার : সেকেণ্ড জেনারেশন কম্পিউটার-এর ট্রানজিস্টার স্থান পেল, এদের সারকিট হল ফার্স্ট জেনারেশন-এর তুলনায় অনেক ছােট; এবং এছাড়া, এরা তাপ বিকিরণ করল প্রথমােক্তদের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে। এদের পরিচালনা করতে অপেক্ষাকৃত কম শক্তি দরকার হল। সর্বোপরি, এদের কাছ থেকে অতি দ্রুত কাজ পাওয়া গেল এবং এরা হয়ে উঠল বিশেষ নির্ভরযােগ্য। সেকেণ্ড জেনারেশন কম্পিউটার-এর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা করে 'আই বি এম ১৪০১‌। 
থার্ড জেনারেশন কম্পিউটার : এর ক্ষুদ্রাকার সিলিকন বাকসে 'ইনটিগ্রেটিড সারকিট থাকল। এরা দামের দিক থেকে সস্তা হল এবং এছাড়া নির্ভরযােগ্যতার দিক থেকেও সেকেণ্ড জেনারেশনকে ছাড়িয়ে গেল অনেক দূর। দুত কাজ করার ক্ষেত্রে এবং ব্যাপক ক্ষমতা নিয়ে কাজে লাগাবার ব্যাপারে এরা পূর্ববর্তী যুগের কম্পিউটারদের তুলনায় রও অনেক উন্নত হল। 
ফোর্থ জেনারেশন কম্পিউটার : এর প্রয়ােগ দেখা গেল ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে। নতুন যুগের উন্নত ধরনের ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সহায়তায় এদেরকে আগের যুগের কম্পিউটারদের তুলনায় আরও দ্রুত এবং আরও ছােট করে তৈরি করা সম্ভবপর হল। 
মাইক্রো কম্পিউটার : আবার এদের তুলনায় ও আকারে ছােট 'মাইক্রো কম্পিউটার'। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে এদের প্রয়ােগ চলে। এ শ্রেণীর কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় সুবিধা, খুবই স্বল্প ব্যয়ে এদের সংগ্রহ করা সম্ভব হল। ফলে এদের ব্যবহার বেড়ে চলে অতি দ্রুত গতিতে। কলকারখানায় অটোমেশিনের ক্ষেত্রে মাইক্রো কম্পিউটার বহুল পরিমাণে কাজে লাগতে দেখা গেল। এছাড়া,এরা ও ওজনে হালকা হওয়ায় খুব সহজেই এদের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল। এদিকে ১৯৮০ সাল থেকে শুরু হয় ফিফথ জেনারেশন কম্পিউটারের প্রয়ােগ। পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনার কাজে ব্যাপকভাবে এদের ব্যবহার চলতে থাকে। দেখতে দেখতে সৃষ্টি হয় এমন এক শ্রেণীর পরিচালক যারা কম্পিউটারের প্রয়ােগ সম্পর্কিত কিছু কলাকৌশল অধিগত করে এ যন্ত্রটিকে দৈনন্দিন কাজে সাফল্যের সাথে প্রয়ােগ করতে পারেন। 
কম্পিউটার পরিচয় : কম্পিউটারের সাথে সংশ্লিষ্ট জিনিসগুলাের কয়েকটি সাংকেতিক নাম আছে। যেমন -'ইনপুট', সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট’, ‘আউটপুট ডিভাইস’ ইত্যাদি। 'ইনপুট বলা হয় সে বিশেষ ব্যবস্থাকে যা কাজ করার নিদের্শ গ্রহণ করে। 'সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট’কে এক কথায় বলা যেতে পারে কম্পিউটারের হূৎপিণ্ড। এ অংশটিই তুলনা করে, হিসাব কষে, সিদ্ধান্ত নেয়, নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নির্দেশ দেয়। 
উপসংহার : আজ আর কল্পনা করতে বাধা নেই যে, আগামী দিনে কম্পিউটার হয়ত আরও দ্রুত কাজ করতে পারবে। হয়তাে বা আরও বেশি নির্ভর করা যাবে তার উপর। ভবিষ্যতে কম্পিউটার প্রােগ্রামিং- এর কাজও নিশ্চয় আরও সরল হবে এবং শুধুমাত্র ইংরেজির মত ভাষার মাধ্যমে নির্দেশ দিয়ে নয়, মৌখিক নির্দেশের মাধ্যমেও তার সাথে যােগাযােগ করা যাবে। তবে এ ব্যাপারে সমস্যাও যথেষ্ট, মানুষ যন্ত্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে গিয়ে নিজে না যান্ত্রিক হয়ে পড়ে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment