SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বাংলা সাহিত্য বা বাংলা সাহিত্যের পরিচয়

ভূমিকা :
বাংলা সাহিত্য বিশ্বের একটি সমৃদ্ধ সাহিত্য। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, রাশান, স্পেনিশ এই সকল সাহিত্যের সাথে বাংলা সাহিত্যেকে স্থান দেয়া যায়। শুধু সমৃদ্ধ নয়, লােকসংখ্যার দিক দিয়েও ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, স্পেনিশ, রাশান, আরবির পরেই বাংলার স্থান। চক্বিশ কোটি লােকের অধিক বাংলা ভাষাভাষী। ভারতীয় উপমহাদেশের লােকসংখ্যার দিক দিয়ে হিন্দীর পরেই বাংলার অবস্থান।
প্রাচীন কালের বাংলা সাহিত্য : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন। এই সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। সপ্তম-অষ্টম শতক থেকে একাদশ শতকের মধ্যে চর্যাগীতিকাগুলাে লেখা। বৌদ্ধ সাধকগণ তাঁদের ধর্মীয়, বিশ্বাসকে চর্যাগীতির মাধ্যমে রূপ দিয়েছেন। সুতরাং বাংলা সাহিত্যের মূল সুর যে গীতিসুর, তা চর্যাগীতিতে লক্ষ্য করা যায়। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের কালকে নির্ণয় করা যায় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতক।
মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের সূচনা ত্রয়ােদশ শতকে এবং অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত এই সাহিত্যের স্থিতিকাল। মুসলমান কর্তৃক বাংলাদেশ বিজয়ের ফলে (১২০৪ খৃস্টাব্দ) বাংলা সাহিত্যে নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্য মূলত তিনটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছে- বৈষ্ণব সাহিত্য, মজ্গল কাব্য এবং মুসলমানী পুঁথি সাহিত্য। বৈষ্ণব পদাবলী এবং শ্রীচৈতন্যের জীবনী বৈষ্ণব সাহিত্যের অন্তর্গত। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম নিয়ে বৈষ্ণব পদগুলাে রচিত হয়েছে। অগণিত কবি পাঁচশ বছর ধরে বৈষ্ণব পদ রচনা করেছেন এবং এর মধ্যে শতাধিক মুসলমান কবিও আছেন। শ্রীচৈতন্যের মহিমা কীর্তন করে জীবনী লেখা হয়েছে। তবে এই সব জীবনীতে বাস্তবের চাইতে কল্পনার প্রাধান্য বেশি। বৈষ্ণব পদকর্তদের মধ্যে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গােবিন্দদাস বিশেষভাবে উল্লেখ্য। দেব-দেবীদের মহিমা কীর্তন করে মধ্যযুগে অসংখ্য কাব্য রচিত হয়েছে-যেমন, মনসা, চণ্ডী, ধর্ম ঠাকুর, দক্ষিণা রায় ইত্যাদি। এগুলােকে মজালকাব্য বলা হয়। মঙ্গলকাব্যের কবিদের মধ্যে চণ্ডীমঙ্গলের কবি মুকুন্দরাম উল্লেখযােগ্য। মুসলমানী পুঁথি সাহিত্যের মধ্যে নানারূপ কল্পনাশ্রিত বা রােমান্টিক কাহিনীকাব্য রচিত হয়েছে। যেমন, ইউসুফ-জোলেখা, হানিফা ও কয়রাপরী, সয়ফুল, মুলক, লাইলী-মজনু, মনােহর-মধুমালতী, জঙ্গনামা, বিদ্যাসুন্দরী, গুল-ই-বকাওলী, জেবুলমুলক সামারুখ, গদা-মল্লিকা, ইত্যাদি। ‘পদ্মবতী’ রচয়িতা আলাওল নিঃসন্দেহে মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যে : এদেশে ইংরেজের আগমনের ফলে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সুত্রপাত ঘটে। বস্তুত ১৮০০ খৃস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূচনা। ১৮০১ খৃস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে বাংলা বিভাগ খােলা হয়। এখানে বাংলা গদ্যের যে চর্চা শুরু হয় এর ফলেই বাংলা সাহিত্যে বিচিত্র সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, ছােট গল্প, ভ্রমণকাহিনী, রম্যরচনা ইত্যাদি রচিত হতে থাকে। প্রবন্ধ-রচয়িতারূপে রাজা রামমােহন রায়, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত উল্লেখ্য। নাট্যকাররূপে মুধুসূদন, দীনবন্ধু, গিরীশ ঘােষ উল্লেখযােগ্য। উপন্যাস লেখেন বঙ্কিমচন্দ্র, রমেশ দত্ত প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্ৰমণকাহিনী, উপন্যাস, নাটক, প্রহসন ছাড়াও রচনা করেন অনবদ্য ছােট গল্প। শুধু গদ্য নয়, কাব্যের মধ্যেও কত বৈচিত্র্য- আকারে ও প্রাকরে -দেখা গেল। মধুসূদন রচনা করেন মহাকাব্য-"মেঘনাদবধ কাব্য'। এরপর হেমচন্দ্র ও নবীন সেন মহাকাব্য রচনা করেন। কিন্তু মহাকাব্যের যুগ শিগদির স্তিমিত হয়ে এল। শুর হল গীতিকবিতার পালা। আধুনিক বাংলা গীতিকবিতার জনক বিহারীলাল এবং বিহারীলালের প্রভাব কিশোর রবীন্দ্রনাথের ওপর বর্তায়। বাংলা গীতিকবিতার চরম উৎকর্ষ ঘটে রবীন্দ্রনাথের হাতে। রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলী’ রচনা করে বাংলা সাহিত্যের জন্য দুর্লভ সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এলেন। সাহিত্যের জন্য তিনি বাংলাদেশে-এবং সমগ্র এশিয়ায়-নােবেল পুরস্কারে সর্ব প্রথম ভূষিত হলেন (১৯১৩)। বাংলা সাহিত্য বিশ্বসাহিত্য আসন পেল। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা কাব্য গগনে আবির্ভূত হলেন নজরুল। তিনি বাংলা বাজিয়েছেন। জসীম উদ্দীনের কবিতায় বাংলার পল্লীজীবন রূপ পেয়েছে। গীতিকবিতায় বিদ্রোহের রণনিনাদ তিরিশের দশকে রবীন্দ্রনাথের বিরােধিতা করে কয়েকজন শক্তিশালী কবি আবির্ভূত হন সুধীন দত্ত, বিষ্ণু দে, অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু। জীবনানন্দের কবিতায় বাংলার প্রকৃতি মায়াবী রূপ পেয়েছে। কথা সাহিত্যে বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথের পর শরৎচন্দ্র চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। শরৎচন্দ্রের মতাে এমন দরদি কথাশিল্পী আর দেখা যায় না। তারপর তারাশঙ্করের উপন্যাসে রাঢ় অঞ্চলের জীবন, বিভূতীভূষণ, বন্ধোপাধ্যায়ের উপন্যাসে দক্ষিণ বাংলার শান্ত প্রকৃতি ও মানুষ রূপ পেয়েছে।
পূর্ব বাংলার সাহিত্য : ১৯৪৭- এ ভারত বিভাগ হল। দেশ বিভাগের পর এখানকার সাহিত্যে মুসলমানের জীবন ও রূপায়নের একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। এ জীবনবােধের রূপকারদের মধ্যে ফররূখ আহম্মদ, শাহাদাৎ হােসেন, আবুল ফজল, শওকত ওসমান, সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ, আবু ইসহাক প্রমুখ উল্লেখ্য।
বাংলাদেশের সাহিত্যে : এরপর আসে একাত্তরের মুক্তিসংগ্রাম। ত্রিশ লক্ষ প্রাণের অর্জিত হল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।  এদেশের সাহিত্যে এখানকার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, বাসনা-বেদনা, সুখ-দুঃখ প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, রশিদ করিম প্রমুখ উল্লেখ্য। 
উপসংহার : বাংলা সাহিত্য বিশ্বের দরবারে সগৌরবে প্রতিষ্ঠিত এবং আন্তর্জাতিক মর্যাদায় সমাসীন। আমাদের জাতীয় জীবনে আমাদের সাহিত্যই সব চাইতে গৌরবের। বাংলা সাহিত্য আমাদের পরম প্রিয় সম্পদ।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment