SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা কম্পিউটার ও আধুনিক সভ্যতা অথবা, কম্পিউটার ও বর্তমান বিশ্ব

ভূমিকা : যন্ত্রবিজ্ঞানের আবির্ভাব মানুষের চিন্তা-চেতনাকে পরিবর্তিত করেছে। বৃদ্ধি করেছে কর্ম ও উৎপাদন-ক্ষমতা। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ  সহজেই পৃথিবীকে মুঠোর মধ্যে আনতে পেরেছে। বাম্পশক্তি, বিদ্যুৎশক্তি ও আণবিক শক্তি যন্ত্রবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার নিত্যনতুন দ্বার গিয়েছে খুলে। ফলে সংখ্যাতীত আবিষ্কারের দ্বারা মানুষ যন্ত্রশক্তির সহায়তায় হয়েছে দুর্বার শক্তির অধিকারী। যন্ত্র আজ মানুষের হাতের ক্রীড়নক। তার কর্মজীবনের  বৃহত্তর ক্ষেত্রে অনুগত ভৃত্যের মতাে হুকুম পালন করতে যে যন্ত্র সদাব্যস্ত, তার নাম কম্পিউটার। কম্পিউটার বিজ্ঞানের এক যুগান্তকারী বিস্ময় ও আধুনিকতম আবিষ্কার। 
উদ্ভাবন ও ক্রমােন্নতি : কম্পিউটার উদ্ভাবনের জনক হিসেবে খ্যাতির অধিকারী হলেন ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। তাঁর পরিকল্পিত গণকযন্ত্রই কম্পিউটার নির্মাণের প্রেরণা জুগিয়েছে পরবর্তীকালে । ব্যাবেজের গণকযন্ত্রের পরিকল্পনা ছিল অষ্টাদশ শতকের তৃতীয় দশকে। এর প্রায় এক শতাব্দীকাল পরে ইলেকট্রনিকস্ ও প্রযুক্তিবিদ্যার মেলবন্ধনে মানুষের হাতে এলাে ইলেকট্রনিক যন্ত্রগণক। ল্যাটিন শব্দ কম্পিউটেয়ার থেকে কম্পিউটার' কথার উদ্ভব।
কম্পিউটার ও তার কার্যকারিতা : কম্পিউটার যেন যন্ত্রমস্তিষ্ক। কম্পিউটারের থাকে তিনটি সুস্পষ্ট অংশ- এক: ইনপুট; দুই: সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট তিন : আউটপুট। যে কোনাে সমস্যা সংক্রান্ত সবরকম তথ্য নিয়ে কাজ করে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট। ইনপুট' তথ্য সংবলিত নির্দেশ প্রদান করে আর আউটপুট' প্রকাশ করে গণনা সংবলিত ফল। যে যাবতীয় তথ্য নিয়ে কম্পিউটার কাজ করে তাকে বলে 'প্রােগ্রাম'। কম্পিউটারে তথ্য ও নির্দেশ প্রদানের জন্যে যে বিশেষ ভাষা ব্যবহার করা হয় তাকে বলে 'প্রােগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। কম্পিউটারের কার্যকারিতা ও প্রয়ােগক্ষেত্র ব্যাপক। কারণ কম্পিউটারের আছে অতি দ্রুত গণনার শক্তি, বহু তথ্যকে গুছিয়ে মগজে ধরে রাখার ক্ষমতা। কম্পিউটার কাজ করে বাইনারী সংখ্যার ভিত্তিতে।
কম্পিউটারের অংশসমুহ: কম্পিউটারের প্রধানত দুইটি অংশ থাকে। 
১.  সফটওয়্যার 
২.  হার্ডওয়্যার
 সফটওয়্যার হলাে হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে যােগসূত্র স্থাপনকারী। এর ফলে কম্পিউটার ব্যবহার উপযােগী হয়। সফটওয়্যার প্রধানত ২ প্রকার। 
ক. সিস্টেম সফটওয়্যার 
খ.  এপ্লিকেশন প্রােগ্রাম
হার্ডওয়্যার হলাে কম্পিউটারের বাহ্যিক আবরণ বা যন্ত্রাংশসমূহ। যেমন: মনিটর, সিপিইউ, কী-বাের্ড, জয়স্টিক ইত্যাদি। 
কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন : কম্পিউটার আধুনিক যুগে মানুষের পরম নির্ভরযােগ্য বন্ধু। কোটি কোটি সংখ্যার অঙ্ক মিলিয়ে নির্ভুল হিসাব ব্যাংকের ক্যাশিয়ার কমিটির হাতে অতি অল্পসময়ে তুলে দিয়ে তাকে নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায় ঘরমুখাে করিয়ে দিতে পারে কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যমে বড় বড় কল-কারখানায় বসে উৎপাদনের পরিকল্পনা ও তা নিয়ন্ত্রণ করছে, শ্রমিক নিয়োেগ ও বরখাস্ত করছে, লাভ-ক্ষতির হিসাব-নিকাশ করছে। রেলওয়ে, এয়ারলাইন্স, ব্যাংক, রিসার্চ সেন্টার, ইনসিওরেন্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটারের অপ্রতিহত আধিপত্য বিরাজমান। পরীক্ষার ফল প্রকাশ, অপরাধীকে খুঁজে বের করা, পুরনাে মামলার নথিপত্র খুঁজে তথ্য সরবরাহ করা, বিজ্ঞাপন প্রচার করা এ সমস্তই এখন করছে মানুষের সৃষ্ট ঐ যন্ত্র- মগজ। কম্পিউটার চালিত স্ক্যানার খুঁজে এনেছিল আটলান্টিক মহাসাগরে ভেঙে পড়া বিমানের 'ব্ল্যাকবক্স। যেসব দুরূহ কাজ মানুষের অসাধ্য, যেসব দুর্গম স্থান মানুষের অগম্য- সেখানেই কম্পিউটারের প্রয়ােগ, আর সেখানে তার অকল্পনীয় সাফল্য। আধুনিক জীবনে কম্পিউটার তাই অপরিহার্য। একই কারণে আধুনিক সভ্যতায় কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশেও কম্পিউটারের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এদেশে এখন মূলত মুদ্রণ শিল্পে এবং ব্যাংক-অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। স্যা
কম্পিউটার, বেকারত্ব সমস্যা ও কর্মসংস্থান : বিজ্ঞানীদের চেষ্টায় এ যন্ত্রদানবের ক্ষমতা অপরিসীম। তাদেরই আশঙ্কা মানুষের সৃষ্ট এ যন্ত্রদানবকে দিয়ে কাজ করাতে করাতে এমন একসময় আসবে, যখন কাজের ক্ষুধায় উন্মত্ত দানব তার স্রষ্টা মানুষকেই করবে ক্রীতদাস। কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে দেখলেই বাস্তব সত্যটা স্পষ্ট হয়ে দাঁড়ায়। কম্পিউটারের ব্যাপক প্রয়ােগ ও ব্যবহার ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে করবে অনেকাংশে কর্মহীন। যন্ত্র তখন মানুষের ক্রীড়নক না হয়ে মানুষ হবে যন্ত্রের ক্রীড়নক। মানুষের কাজ কেড়ে নেওয়ার ফলে বেকারের মিছিলে ভরে যাবে দেশ। কম্পিউটারের ব্যবহারে ইতােমধ্যে অফিসে, শিল্প-প্রতিষ্ঠানে, বিভিন্ন সংস্থায় কর্মীর সংখ্যা উল্লেখযােগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য অপরদিকে কম্পিউটার বহু নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রও সৃষ্টি করছে। অপারেটর, প্রােগ্রামার, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পদে বহুলােকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। এভাবে কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে কম্পিউটার কর্মহীনতার সৃষ্টি করলেও সামগ্রিকভাবে এটি বহু কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি করবে।
উপসংহার : বিজ্ঞানের আশীর্বাদ থেকে মানুষ পিছিয়ে থাকতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলােতে আজ আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার প্রবেশ অপরিহার্য। কম্পিউটারকেও আজ আর ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। অনিবার্যভাবেই তার আগমন ঘটে গেছে সারা দুনিয়ায়। সেক্ষেত্রে দেশের বাস্তব অবস্থাকে স্বীকার করেই প্রয়ােগ-ক্ষেত্র নির্বাচন করতে হবে। এর প্রয়ােগের মধ্য দিয়েই আমাদের খুঁজে বের করতে হবে নতুন কর্মসংস্থানের উপায়। শতাব্দীর এ বিস্ময়কর আবিষ্কারটিই আজ বলে দেবে কোন পথে আমাদের সার্থকতা আর কোন পথ আমাদের অনগ্রসরতার কারণ। সেদিনের অপেক্ষায় আমরা আছি।


লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment