SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বর্তমান সভ্যতায় বিদ্যুতের ভূমিকা

বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন
বা উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ
বা দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুৎ
বা বিদ্যুৎ ও বর্তমান সভ্যতা
ভূমিকা : আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আর এ বৈজ্ঞানিক যুগের এক বিশিষ্ট আবিষ্কার হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের এ আবিষ্কারে মানবসভ্যতার ইতিহাস সূচিত হয়েছে এক কালজয়ী অধ্যায়। এর অবদানে মানবজীবন ও সভ্যতার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এর ঐন্দ্রজালিক শক্তি গােটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের হাতের মুঠোয়; আমাদের আধুনিক জীবনকে করেছে আরাে অত্যাধুনিক। এর অভাব আমাদের কর্মচঞ্চল দিনকে করে দেয় স্থবির এবং প্রাত্যহিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ। 
বিদ্যুতের আবিষ্কার : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডে বিদ্যুৎ শক্তি আবিষ্কার করেন। আর এ বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়ােগ কৌশল কার্যকর করেন বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন। বর্তমান সভ্যতার বিকাশ ও ফ্যাক্স ও ই- অগ্রগতি সাধনে ফ্যারাডে ও এডিসনের এ আবিষ্কার এক অনন্য অবদান। 
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের গুরুত্ব : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার অপরিসীম। এটি ছাড়া আমরা আধুনিক জীবন কল্পনাও করতে পারি না। আমাদের নিত্য প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি যেমন-বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি, বেতার, টেপরেকর্ডার, টেলিভিশন, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স, ই-মেইল, টেলেক্স, রেফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, এয়ারকন্ডিশনার ইত্যাদি পরিচালনার জন্য বিদ্যুতের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়াও চিকিৎসাক্ষেত্রে, যােগাযােগ ব্যবস্থায়, অফিস আদালতে, শিল্পক্ষেত্রেও বিদ্যুতের ব্যবহার হয়ে থাকে। নিম্নে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার আলােচনা করা হল। 
বৈদ্যুতিক পাখা : গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ায় আমাদেরকে প্রশান্তি এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক পাখার ছাড়া আমরা একটি মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না। আর এ প্রধান চালিকা শক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। 
বৈদ্যুতিক বাতি : বৈদ্যুতিক বাতি আমাদের নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মধ্যে একটি। আমাদের বাসগৃহ, অফিস আদালত ইত্যাদিকে আলােকিত করতে এর প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। 
রেফ্রিজারেটর ও এয়ারকন্ডিশনার : রেফ্রিজারেটর বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর অবদান। এতে আমাদের নিত্য প্রয়ােজনীয় খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়। এটি রক্ষিত খাদ্যদ্রব্যের পচন রােধ করে এবং খাদ্যদ্রবকে সতেজ রাখে। আর বিদ্যুৎ-ই এর কার্যক্রম বজায় রাখে। আবার আবহাওয়ার উষ্ণতা শােষণ করে আমাদের বাসগৃহ ও অফিস আদালতকে শীতল করার কাজে এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহৃত হয়, যা বিদ্যুতের সাহায্যেই চলে। 
বেতার ও টেলিভিশন : রেডিও এবং টেলিভিশন হচ্ছে এমন দুটি উপকরণ, যাদের সাহায্যে আমরা দেশ বিদেশের চলতি ও আরামপ্রদ ঘটনাবলির খবরাখবর জানতে পারি। তাছাড়া এগুলােতে চিত্তবিনােদনমূলক অনুষ্ঠান, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন তথ্যাদি প্রচার করা হয়। 
টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স ও ই-মেইল : দূরবর্তী স্থানে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্য আমাদের দৈনন্দিন জীবনে টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স ও ই-মেইল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ। 
কম্পিউটার : বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হচ্ছে 'কম্পিউটার। এটি দ্রুত ও নির্ভুল গণনা করে এবং তথ্য রাখে। আজকাল ব্যবসাবাণিজ্য, চিকিৎসা শাস্, খেলাধুলা, প্রকাশনা মাধ্যম, শিল্পকারখানা, শিক্ষা, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক, সামাজিক সবক্ষেত্রেই এর ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। মানবসভ্যতার অগ্রদূত কম্পিউটারের এসব কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ শক্তির অবদান। 
মুদ্রণশিল্প : জ্ঞানবিজ্ঞানের বিকাশের জন্য মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর সাফল্য। মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে আজ হাজারাে জ্ঞানবিজ্ঞানের বই প্রকাশিত হচ্ছে, যা আমাদের সুর্ত্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। তাছাড়া আমরা সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ বিদেশের সংবাদ পাঠ করার দুর্লভ সুযােগ লাভ করছি। আর তা ছাপার জন্য মুদ্রণযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। মুদ্রণযন্ত্রের এসব কর্মকাণ্ড বিদ্যুতের সাহায্যে সম্পাদিত হচ্ছে। 
শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুৎ : আধুনিক সভ্যতার উন্নত জীবনযাপনের পূর্বশর্ত হচ্ছে শিল্পোন্নয়ন। আর এ শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়ােজন বিদ্যুৎ। কারণ, বিদ্যুৎ ছাড়া কলকারখানা চলতে পারে না। কলকারখানার ঋবিরতা দূর করে শিল্পোৎপাদনে গতি সঞ্চারের মূলে রয়েছে বিদ্যুৎ। 
যােগাযােগ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ : যােগাযােগ ব্যবস্থাকে সহজতর ও দ্রুত করার লক্ষ্যে প্রগতিশীল- দেশগুলাে তৈর করেে রেলগাড়ি ও আধুনিক কনকর্ড বিমান, যেগুলাে তৈরির মূলে রয়েছে বিদ্যুতের অবদান। এছাড়া ভূগর্ভে স্থাপিত পাতাল রে লাইনে দ্রুততম টিউব রেল চালু করা হয়েছে, যা বিদ্যুতের সাহায্যেই চলে। 
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিদ্যুৎ : সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে চিকিৎসাক্ষেত্রে যে উন্নতি সাধিত হয়েছে তাতে বিদ্যুতের ভূমি অপরিসীম। কারণ, মানবদেহের জটিল রােগ-নিরসনে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, সেগুলাে বিদ্যুতের সাহায্যে মলিত হয়ে থাকে। 
বিদ্যুতের ক্ষতিকর দিক : আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের অসংখ্য উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত বৈদ্যুতিক শক কেড়ে নেয় মানুষের মূল্যবান জীবন। তাছাড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে সৃষ্ট অগ্নিকাে ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের ধনসম্পদ, শিল্পকারখানা ও উৎপাদিত শিল্প দ্রব্য। 
উপসংহার : বিদ্যুৎ আধুনিক জীবন ও সভ্যতার মূল চালিকা শক্তি। মাইকেল ফ্যারাডে বলেছেন, "Electricity is the of civilization." অর্থাৎ, বিদ্যুৎ হচ্ছে সভ্যতার প্রাণ। কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়ােজনের তুলনায় বিদ্যুতের উৎপাদন কম। তদুপরি আমাদের অসচেতনার কারণে যথেষ্ট বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। সুতরাং জাতীয় জীবনে উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিদ্যুতের স্বাভাবিক উৎপাদন ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment