SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বাংলাদেশের উৎসব

সামাজিক উৎসব
বা বাঙালি উৎসব বৈচিত্র্য
বা উৎসবে বাংলাদেশ
ভূমিকা : উৎসবের দেশ বাংলাদেশ। ভিন্ন ভিন্ন ঋতুর রূপ বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ যেমন সৌন্দর্যময়ী তেমনি আকর্ষণীয়া। এজন্যই। কবি বলেছেন, "এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তনু বজো ভরা। বাংলাদেশে বিভিন্ন উৎসব রয়েছে। এ উৎসবগুলােকে আবার কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-ধর্মীয় উৎসব, সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব, পারিবারিক উৎসব, মনীষী স্মরণােৎসব ইত্যাদি।
ধর্মীয় উৎসব : বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসগুলাের মধ্যে মুসলমানদের ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, মহররম; হিন্দুদের দুর্গাপূজা সরস্বতীপূজা; কালীপূজা, খ্রিস্টানদের বড়দিন ইত্যাদি প্রধান। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশের মুসলমানগণ বিশ্বের অন্যান্য মুসলমানের ন্যায় পবিত্র ঈদুল ফিতর বা ঈদ উৎসব পালন করে থাকেন। দুর্গাপূজার জন্য হিন্দু সম্প্রদায় সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন। শরৎকাল এলেই ঘরে ঘরে সাড়া পড়ে যায়। দুর্গাপূজা শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয় বলে একে শারদোৎসব বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশে আরও অনেক ছােটখাট ধর্মীয় উৎসব পালন করা হয়।
সামাজিক উৎসব : বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলাের মধ্যে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারি বা শহীদ দিবস, নববর্ষ উৎসব ইত্যাদি প্রধান। স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও শহীদ দিবসকে বাংলাদেশে জাতীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা হলেও ২১ ফেব্রুয়ারিকে শােক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলা ভাষা তথা মাতৃভাষার জন্য সংগ্রাম করে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারসহ বাংলার অনেক দামাল ছেলে জীবন দিয়েছে। এ দিনটিকে উপলক্ষ করে বাংলাদেশে বইমেলা এবং নানা সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বাংলা নববর্ষ বাঙালির একটি প্রধান সামাজিক উৎসব। এ দিনে 'হালখাতা পণ্যাহ, বৈশাখী মেলা ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হালখাতা বাংলাদেশের মানুষের একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে নতুন করে হিসেবের খাতা চালু করা হয়। মিষ্টি মুখের মধ্য দিয়ে শুভ নতুন দিন কামনা করা হয়। এ ছাড়াও বিয়ে, বনভােজন ইত্যাদি সামাজিক উৎসব পালিত হয়ে থাকে।
সাংস্কৃতিক উৎসব : একুশের বইমেলা, আলােচনা সভা, ঢাকা বইমেলা, প্রিমিয়ার ব্রিকেট লীগ, ফেডারেশন কাপ ফুটবল লাগ প্রভৃতি বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব। সংস্কৃতিমনা জনগণ এসব উৎসব থেকে জ্ঞান এবং আনন্দ দুটোই লাভ করে থাকে। একুশের বইমেলা ও আলােচনা উৎসব বাংলাদেশের মানুষের সাংস্কৃতিক জীবনকে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এ উৎসবের গুরুত্ব অপরিসীম
পারিবারিক উৎসব : নবজাতকের জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানাবিধ পারিবারিক উৎসব বর্তমান। এগুলোর মধ্যে খানা, অন্নপ্রাশন, বিয়ে, শ্রাদ্ধ, নবান্ন, পৌষপার্বণ প্রভৃতি প্রধান। নবজাতকের নাম রাখার দিনেও পারিবারিক উৎসবর আয়ােজন করা হয়। অনেক পরিবারেই জন্মােৎসব পালন করা হয় অত্যন্ত জাকজমকের সাথে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক উৎসবের প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। এসব উৎসবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তাদের জীবনকে পূর্ণ করে তােলে। 
মনীষী স্মরণােৎসব : বাংলাদেশে প্রায়ই মনীষী স্মরণােৎসব অনুষ্ঠিত হয়। মনীষী স্মরণোৎসবের মধ্যে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মীর মশাররফ হােসেন, মহাকবি কায়কোবাদ, ইসমাইল হােসেন সিরাজী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, পল্লীকবি জসীম উদ্দীন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা ভাষানী প্রধান। তাদের জন্ম, মৃত্যু এবং অবদান সম্পর্কে প্রতিবছরই আলােচনা ও মরণােৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি। বছরব্যাপী তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী উৎসব পালন করা হয়। ২৫শে বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মােৎসব পালন করা হয়। এছাড়া এ. কে. ফজলুল হক, হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদসহ বাংলাদেশের নেতাদের জন্ম মৃত্যুৎসব অতি গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। প্রতিবছর এসব জাতীয় নেতাদের স্মরণ করা হয় তাঁদের অবদানের জন্য। 
উৎসবের নানা দিক : বাংলাদেশের উৎসবের নানা দিক রয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবের মধ্যে মিলন ও ঐক্যতত্ত্বের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। মুসলমানদের মহররমে হিন্দুদের অংশগ্রহণ কিংবা হিন্দুদের দেবােৎসবে মুসলমানদের অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। আবার নববর্ষ উৎসবে হিন্দু ও মুসলমানগণ একই সাথে অংশ নিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এটি একটি সর্বজনীন উৎসব। যেমন-'হালখাতা বাংলাদেশে কোন একক সম্প্রদায়ের উৎসব নয়। খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের লােকেরাই সমানভাবে অংশগ্রহণ করে। অবশ্য ইদানীং উৎসবের রুচিয়িগ্ধ সৌন্দর্যটি নানা অসংযমে ও অশালীনতায় বিবৃত হতে বসেছে, এটা খুবই দুঃখজনক। আমাদের উৎসবের কল্যাণময় সুন্দর রূপটি যাতে বিকৃত না হয়। ধর্ম, বর্ণ এবং দলমত নির্বিশেষে সেদিকে সকলের দৃষ্টি দেয়া বিশেষ প্রয়ােজন। 
উপসংহার : বেদনাবিধুর জীবনে উৎসব এক নতুন প্রাণ ও নির্মল আনন্দ সঞ্চার করে। তাই উৎসবের শালীনতা ও পবিত্রতা রক্ষা করার ক্ষেত্রে আমাদের সকলেরই সচেতন এবং আন্তরিক হওয়া প্রয়ােজন। দলমত ভুলে গিয়ে, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে উৎসবকে করে তুলতে হবে ঐক্য ও মিলনের প্রতীক। তাহলেই সকল উৎসব আমাদের কাছে নির্মল আনন্দের উৎসব এবং কল্যাণের দৃষ্টান্ত হতে পারে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
1 comment

1 comment

  • Anonymous
    Anonymous
    06 June, 2022
    খুবই সুন্দর হয়েছে
    Reply