SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা জাতি গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা


দেশ গঠনে নারীসমাজের ভূমিকা
ভূমিকা: কোনাে দেশ বা জাতির সামগ্রিক উন্নতি ও কল্যাণের জন্যে শুধু পুরুষ নয়, সমাজের অর্ধশক্তি নারীকেও পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করতে হবে। নারীসমাজ মনুষ্য সমাজ থেকে ভিন্ন নয়। নারী-পুরুষ মিলেই মানবসমাজ। তাই একটি দেশের উন্নয়নে নারীর অবদানকে কোনােক্রমেই অস্বীকার করা যায় না। সমাজের উন্নয়নের সব দায়িত্ব পুরুষের কাধে চাপিয়ে নারীরা গৃহকোণে বন্দি থাকবে এটা আধুনিক যুগে কল্পনা করা যায় না। কোনাে বিশেষ জাতি বলতে যে জনসমাজ বােঝায় সেখানে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশগ্রহণ বিদ্যমান। প্রাচীন কাল থেকেই সভ্যতা গড়ে ওঠার পেছনে পুরুষকে সকল কাজে সহায়তা, প্রেরণা জুগিয়েছে নারী। পুরুষের পাশে থেকে নারী জাতিও সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। অনেকে নারীকে, নারী শিক্ষাকে অবহেলার চোখে দেখে। তারা মনে করে নারীরা দেশের কোনা কাজে লাগে না। তাদের এ ধারণা ভুল। কেননা নারীরা সংসার ছাড়াও দেশের কাজে পুরুষের সমান দক্ষতায় যেকোনাে কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতে সক্ষম। দেশ ও জাতির সামগ্রিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যে নর ও নারী উভয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তাই তাে কাজী নজরুল ইসলাম বলেন-
'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
বর্তমানে নারীর অবস্থা: অতীতে নারীকে অমর্যাদা ও অবহেলার চোখে দেখা হলেও বর্তমানে নারীরা সমাজে বহুলাংশে তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, দর্শনে, শিক্ষা-দীক্ষায় নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সমান যােগ্যতায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজ বিশ্বের অনেক দেশেই নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তাই কবি বলেন- 
'সে যুগ হয়েছে বাসি 
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল নাক-নারীরা আছিল দাসী।' 
নতুন যুগের নব নব কাজে নারীর জয়গান ঘােষিত হচ্ছে আজ। এখন আর নারী পুরুষের গলগ্রহ নয়। বর্তমানকালে নারীসমাজের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী। ঘরে বাইরে সর্বক্ষেত্রে নারীরা তাদের কাজে দক্ষতা প্রমাণ করেছে। 
উন্নত দেশে নারী: উন্নত দেশসমূহে নারীর অবস্থান অনেক সুদৃঢ়। কেননা উন্নত দেশের নারীরা আমাদের দেশের তুলনায় শিক্ষা-দীক্ষা, ইতিহাস দর্শন ও রাজনীতিচর্চায় অনেক এগিয়ে। সেসব দেশে কেউ নারী-পুরুষে কোনাে বিভেদ কল্পনা করে না। দেশের উন্নয়নে সকল কাজে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করতে পারছে। সকল ক্ষেত্রে তারা পারদর্শীও। সমাজের দিক থেকে তারা কোনাে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। তারা আজ পুরুষের মুখাপেক্ষী নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা পুরুষকে অতিক্রম করে গেছে। 
নারীসমাজের গুরুত্ব: যেখানে দেশের অর্ধেক অংশই নারী সেখানে নারীকে বাদ দিয়ে দেশের সামগ্রিক উন্নতির কথা কল্পনাও করা যায় না। একটি জাতি গঠনে নারীর অনেক অবদান রয়েছে। তাই নারীসমাজকে শিক্ষিত করে তুলে তাকে কর্মের সুযােগ সৃষ্টি করে দিতে হবে এবং জাতি গঠনে তাদের ভূমিকা ও প্রয়ােজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিতে হবে। বর্তমান বিশ্বে সেসব দেশই উন্নত, যেসব দেশে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সকল কাজে সমানভাবে এগিয়ে এসে দেশের উন্নয়নে নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারছে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছে। তাই দেখা যায়, জাতিগঠনে নারীসমাজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যেকোনাে জাতির সফল নেতৃত্ব দিতেও নারীরা বিশেষভাবে পারঙ্গম। ব্রিটেন, জার্মানি, শ্রীলংকা, ভারত, বার্মা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানের আসন অলংকৃত করছে নারী নেতৃত্ব। 
জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা ও কর্তব্য: নারীসমাজের হাতে যেমন পরিবারের চাবি থাকে, তেমনই জাতীয় জীবন গঠনের মূল চাবিকাঠি হিসেবে নারীকে আখ্যায়িত করলে ভুল হবে না। সচেতন নারীই সমাজকে সুযােগ্য সন্তান উপহার দিয়ে থাকে। শুধু সংসারেই নয়, বিভিন্ন কল-কারখানায়, অফিস- আদালতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রায় সবক্ষেত্রেই পুরুষের পাশে নারী অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। নারীরা তাদের যােগ্যতা প্রমাণ করেছে সর্বক্ষেত্রে। তাই দেখা যায়, সমাজজীবনে নারী জাতির ভূমিকা অনস্বীকার্য‌। 
শিশু পালনে নারীর ভূমিকা: নারী মায়ের জাতি। পুরুষের পাশাপাশি সকল কাজে সমান অংশীদারী হয়েও মাতৃস্নেহে শিশুকে প্রতিপালন করার অধিকার তারা প্রাকৃতিক নিয়মেই পেয়েছে। তাই কবিদের ভাষায় নারী হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতির মাঝে সকল জীব যেমন লালিত-পালিত হয়, তেমনই শিশুর চরিত্র গঠনে মায়ের শিক্ষাই প্রধান। আগামীদিনের নাগরিক গঠনের গুরুদায়িত্ব পালন করে নারী। একজন মা হিসেবে সার্থকভাবে শিশুকে মানুষ করতে পারলে জাতির উন্নতির পথ সুগম হয়। মায়ের শিক্ষাদানের ধরনই সন্তানের ভবিষ্যৎ কর্মতৎপর জীবনের সােপান। মা যেভাবে তার সন্তানকে মানুষ করে সেভাবেই সে গড়ে ওঠে ভবিষ্যতের জন্যে। 
পরিবারের প্রতি নারীর কর্তব্য: নারীই তার সংসারকে আগলে রাখে। সংসারের ভালাে-মন্দ দেখাশােনার ভার নারীর ওপরই অর্পিত হয়। স্বামীকে ভালাে কাজে উৎসাহ দেয়া ও বিভিন্ন কাজে তাকে সহায়তা করা নারীর কর্তব্য। জাতির উন্নয়ন মানে সমাজের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন। তাই পরিবারের উন্নয়নেও নারীর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। 
শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব: জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারীসমাজকে শিক্ষিত হতে হবে এ সচেতনতাবােধ নারীদের মধ্যেই জাগ্রত হয়েছে। নারীকে সভ্যতার আলােকবর্তিকা দেখাতে বাঙালি নারী বেগম রােকেয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন বালিকা বিদ্যালয়। সমস্ত কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতার বেড়াজাল ভেঙে নারীকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে সদা সােচ্চার ছিলেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল। শত সহস্র কুসংস্কারের বাঁধ ভেঙে চিকিৎসা সেবায় অবদান রাখলেন অধ্যাপক ডা: জোহরা বেগম কাজী। বিশ্বজুড়েই শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব ও সফলতা মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নারীকে যােগ্যতাসম্পন্ন হয়ে দেশােন্নয়নে অবদান রাখতে হলে অবশ্যই শিক্ষার প্রয়ােজন রয়েছে। নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণের যােগ্যতা অর্জনের জন্যে সর্বপ্রকার শিক্ষার প্রয়ােজন রয়েছে। একজন সুশিক্ষিত মাতা তার সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারেন। শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর প্রভাব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে নেপলিয়ন বলেন-'আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, উপহার দিব। আমি তােমাদের একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দিব।'
গৃহস্থালি কাজে নারীর ভূমিকা: গৃহস্থালি কাজে নারীর শ্রমদান অতুলনীয়। স্বামী, পুত্র, কন্যাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যে রান্নাঘর থেকে সার্বিক পরিচর্যায় একজন গৃহিণীকে ১২ ঘণ্টারও অধিক সময় দিতে হয়। অফিসে ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম ব্যয় করার পরিবর্তে সময় ও শ্রমদান করে নারী। সে হিসাবে গৃহস্থালি কাজে নারীর শ্রমের মূল্য পুরুষের আয়ের চাইতে কম নয়। 
কর্মক্ষেত্রে নারী: শিক্ষিত নারীরা দেশের সেবায় বিভিন্ন কর্মে নিয়ােজিত রয়েছে। প্রাচীন কালে নারীরা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু এখন নারীরা বিভিন্ন পেশায় নিয়ােজিত হয়ে স্বনির্ভর। নারীরা আজ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, পুলিশ, আনসার, ব্যবসায়ী, বিমানচালক, সেনাবাহিনীর সদস্য এমনকী রাষ্ট্রপরিচালনায়ও তারা অসামান্য অবদান রাখছে যা জাতির জন্যে খুবই আশাব্যঞ্জক। 
নারী ও পুরুষের সম অবস্থান: বর্তমান যুগে নারী ও পুরুষের সম অবস্থান প্রায় নিশ্চিত হয়েছে। জাতির উন্নয়নে নারী-পুরুষ যৌথ উদ্যোগে কাজ, করছে। প্রাচীন কাল থেকেই নারী পুরুষকে সকল কাজে প্রেরণা দিয়ে আসছে, সহযােগিতা করে আসছে। বর্তমানে নারীরা দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে, শিল্পসাহিত্য, সংস্কৃতিচর্চায়, বিজ্ঞান গবেষণায়, রাজনীতিতে, মহাকাশ অভিযানে, খেলাধুলায় এমনকী সমুদ্রের তলদেশ পরিভ্রমণে পর্বতশৃঙ্গে আরােহণে নারীরা পুরুষের সঙ্গী হচ্ছে। নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে জাতির উন্নতি কখনােই সম্ভব নয়। 
উপসংহার: পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডেই নিহিত একটি জাতির বা দেশের উন্নয়ন। নারীরা পরিবার থেকেই সেই উন্নয়নের কাজে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আজ নারীরা কাজ করছে। সমাজকে সুশৃঙ্খল করে রাখতে, সমাজে উদার মানসিকতা সৃষ্টিতে নারীসমাজের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ। নারীসমাজ শিক্ষিত হলে জাতীয় উন্নয়নে তারা ভূমিকা রাখতে পারবে। নারীকে শিক্ষাগ্রহণে এবং জাতীয় উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসার পথে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা এসব বাধা কাটিয়ে উঠেছে এবং দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারছে। শুধু পুরুষ কখনও একা দেশের উন্নয়নে কাজ করে সফল হতে পারে না। আর যতটুকু পারে নারীর সহযােগিতা ও প্রেরণাতেই। তাই কবি বলেন- 
'কোন কালে একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারী 
প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।'

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment