SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের করণীয়

ভূমিকা:
তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও  জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের করণীয় পাবনা জেট কলেজ জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বিশ্বে আবহাওয়াগত মারাত্মক বিপর্যয় শুরু হয়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বিশেষ করে বাংলাদেশে আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায় বন্যা, টর্নেডে, ঝড়ঝঞ্চা, সাইক্লোনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঘটেছে। পরিবেশ বিপর্যয়। এ বিপর্যয়ের ফলে মানুষের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। পৃথিবী মানুষের বসবাস উপযােগী থাকতে পারবে কি পারবে না, এ বিষয়ে সর্বত্র চলছে জোর আলােচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর বিশ্বসম্মেলন। পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর মানবসমাজের অত্যাচার এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, প্রকৃতি এখন প্রতিশােধ নিতে শুরু করেছে। প্রকৃতির এ বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধন ঘটানাে এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের স্বরূপ: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, বৃক্ষনিধন, শিল্প-কারখানা স্থাপন, দূষণ ও নগরায়ণের ফলে আবহাওয়ায় একটি দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। একেই বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাই জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের অবশ্যই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সম্পর্কে জানতে হবে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলা হয়। যেহেতু পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে প্রতিনিয়ত নানারকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছবাস, বন্যা ইত্যাদি আছড়ে পড়ছে জনবসতির ওপর।
জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান রূপ: গত ১০০ বছরে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা প্রায় ১° সেলসিয়াস (০.৯৮ + ০.১৮° সেলসিয়াস অথবা ১.৩ ° ০.৩২° ফারেনহাইট, বৃদ্ধি পেয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে গত দশ বছরে যেসব ঝড়, বন্যা ও দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে তা এ বৈশ্বক উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ ফল। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১° সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর জলবায়ুতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। রেকর্ড থেকে জানা যায়, বিশ্বের উষ্ণতম বিশটি বছরের মধ্যে উনিশটি ১৯৮০ থেকে ২০০৯ সাল-এর মধ্যে। ২০০০-২০০৯ বিশ্বের উষ্ণতম দশক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ : পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর মানবসমাজের অত্যাচার ইতােমধ্যে এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, এখন তারা প্রতিশােধ নিতে শুরু করেছে। একদিকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গমন ক্রমাগত বাড়ছে, অন্যদিকে উন্নয়ন'-এর নামে প্রতিনিয়ত বনাঞ্জল উজাড় হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আরও বেশি পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরােযফ্লোরাে কার্বনসহ আরও কিছু মারাত্মক ক্ষতিকর গ্যাস মজুদ হয়ে গ্রিন হাউস প্রভাব সৃষ্টি করছে। এ কারণে সূর্যের তাপ যে পরিমাণে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে, তার সবটা বের হতে পারছে না। তা ছাড়া এসব গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের বাইরের দিকে যে ওজোন গ্যাসের আবরণ আছে, তা ক্রমেই ক্ষয় হচ্ছে। উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরুর ওপর ভাগের ওজোন আবরণে ইতােমধ্যে বড় ফাটল সৃষ্টি হয়ে তা ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। ওজন আবরণের ফলে আগে যেভাবে পৃথিবীর বুকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির আগমন বাধাগ্রস্ত হতাে, এখন এ ফাটলের ফলে তার প্রবেশ সেই পরিমাণে আটকানাে যাচ্ছে না। কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি, ওজন আবরণের ক্ষয়বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বাড়ছে। একই সঙ্গে এ বৃদ্ধির গতিও বাড়ছে। ফলে বদলে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য। 
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: জলবায়ু পরিবর্তন প্রকৃতিতে ফেলছে তার পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া। গলে যাচ্ছে পাহাড়ের মাথার সঞ্চিত বরফ, মেরু অঞ্লের হিমবাহ। এসবের ফলে সমুদ্রের পানির স্তর ওপরে উঠে আসতে শুরু করেছে। অবস্থা এ রকম চলতে থাকলে পানির স্তরের উচ্চতা বাড়তে  বাড়তে উপকূল ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবে সমুদ্র ও সমুদ্রের লােনা পানি। জলােচ্ছাসের প্রকোপ বাড়বে, প্লাবিত হতে থাকবে বিস্ত্রীর্ণ অঞ্চল। সমুদ্রে তলিয়ে যাবে কোটি কোটি মানুষ ও জীবজন্তুর আবাসভূমি ও বনাঞ্চল। ১° সেলসিয়াস উত্তাপ বাড়লেই বাংলাদেশের প্রায় ১৭% ভূমি সমুদ্রে তলিয়ে যাবে বলে অনেক গবেষক আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব তাপনের প্রভাবে বর্তমানে প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ শুধু অপুষ্টি ও ম্যালেরিয়ার কারণে মারা যাচ্ছে। এ সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ বেড়ে তিন লাখ হবে। ২০০৪ সালে নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে যে, বিশ্ব তাপনের প্রভাবে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরােধে কর্মসূচি: জলবায়ু পরিবর্তন ইতােমধ্যে বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ কারণে ১৯৭২ সালে স্টকহােমে প্রথম জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে জলবায়ু পরিবর্তন রােধে আমাদের করণীয় বিষয়ে একাধিক ধরিত্রী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৭-১৮ই নভেম্বর ইউএনএফসিসি-র (কপ-২২) ১০৪টি সদস্য-দেশের অনুসমর্থনে মরক্কোর মারাক্কাশ শহরে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না আনতে পারলেও কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে দরিদ্র দেশগুলাের আর্থিক সহযােগিতা প্রদান ও ক্রমান্বয়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে সম্মত হয়েছেন উন্নত দেশের নেতারা। 
উপসংহার: জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তন বিশ্বের অস্তিত্বের প্রধান সংকট। এর ফলে বিশ্বের ভৌগােলিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য (Bio-diversity)। কৃষির ওপরও এর বিরূপ প্রভাব লক্ষণীয়। তবে বাংলাদেশের ওপরে এর প্রভাব অত্যন্ত বেশি। অনেক গবেষকের মতে, বাংলাদেশের একদিকে মরুকরণ, অন্যদিকে বন্যা, সাইক্লোন, জলােচ্ছাস প্রভৃতির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী। অন্য গবেষকরা বলছেন, এর জন্য ভারত কর্তৃক বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীতে দেওয়া বাধই দায়ী। কিন্তু এ বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মহলের যেমন নজর দেওয়া উচিত, তেমনিভাবে আমাদেরও উচিত নানামুখী পদক্ষেপ নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের করালগ্রাস থেকে মুক্তির উপায় বের করা।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment