SkyIsTheLimit
Bookmark

যুবসমাজে মাদকাসক্তি রচনা


মাদকাসক্তির কুফল 
বা মাদকমুক্ত বাংলাদেশ
বা মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার
ভূমিকা : দেশের যুবসমাজ সমগ্র দেশের জন্য একটি বিরাট শক্তি। মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে যৌবন যেমন শক্তি ও প্রতীক, তেমনি জাতীয় জীবনেও যুবসমাজ অফুরন্ত কর্ম প্রেরণার উৎস হিসেবে যুবসমাজের প্রাণশক্তির জয়গান গেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের যুবশক্তি বিষয়ক উক্তি উল্লেখযোগ্য। আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যুবসমাজের বলিষ্ঠ ভূমিকা ঐতিহাসিক মর্যাদায় চিহ্নিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে পশ্চিমা দেশের মত বাংলাদেশের যুবসমাজেও অবক্ষয় নেমে আসে। সমাজবিজ্ঞানী ও মনােবিজ্ঞানীদের মতে অবক্ষয়ের অনেক কারণ বিদ্যমান। কারণসমূহের মধ্যে ধনী পরিবারের ঐশ্বর্য, অভিভাবকের দায়িত্বহীনতা, ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের অনিশ্চয়তা, অশ্লীল সিনেমা, পত্রপত্রিকার প্রভাব ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
মাদকাসক্তির কারণ : যুবসমাজের অবক্ষয় বিভিন্ন রকমের। খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, নারী ধর্ষণ, মাদকাসক্তি ইত্যাদি অবক্ষয়ের লক্ষণ হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। বলাবাহুল্য এসব অবক্ষয় পশ্চিমা অপসংস্কৃতির কুপ্রভাবের ফলেই আমাদের মত অনুন্নত গরিব দেশে দেখা দিয়েছে। আমরা এখন যুবসমাজে মাদকাসক্তি সম্পর্কে আলােচনা সীমাবদ্ধ রাখার প্রয়াস পাব। বিংশ শতাব্দীকে সভ্যতার চরম উৎকর্ষের স্বাক্ষর সমৃদ্ধ বলে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এ সভ্যতার উৎকর্ষের পাশাপাশি অত্যাধুনিক পারমাণবিক মারণাস্ত্রের আবিষ্কার সভ্যতার ভিত্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। মানবতাবাদী বিবেকবান মনীষীরা মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফলে একদিন এ সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন। বিংশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে মরণাস্ত্রের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকারক একটি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। এ উপসর্গের নাম মাদকাসক্তি। মাদক দ্রুব্যের যথেষ্ট ব্যবহার সংক্রামক ব্যাধির মত পুথিবায় এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ যে, যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে চোরাচালানীর মাধ্যমে মাদকদ্রব্য এক দেশ থেকে অন্য দেশে অতি সহজে ও তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ছে। পশ্চিম গােলার্ধের ঐশ্বর্যশালী দেশ থেকে বাংলাদেশের মত গরিব দেশেও মাদকদ্রব্য ইদানিং সুলভ হয়ে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশের কিছু সংখ্যক যুবক-যুবতী হিরােইন, কোকেন, হাসিস, গাজা, ভাং ইত্যাদি মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েছে। বলা নিষ্পরয়ােজন যে, এ আসক্তি দেশের সম্ভাবনাময় যুব শক্তির জন্য ভয়ঙ্কর হুমকিস্বরূপ। যে তরুণ সমাজ তাদের অসীম সাহস ও অসাধারণ কাজের জন্য আমাদের গৌরব ছিল, মাদকাসক্তির কুষভাবে সে তরুণ সমাজের এক অংশ আজ বিপথগামী। মাদকদ্রব্য সেবন শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এ মাদকাসক্তি মানুষকে জঘন্য এক পাপ কার্যে লিপ্ত করে। আমরা ইতিমধ্যে দেশে মাদকাসক্তির প্রচুর কুফল পত্রপত্রিকা ও জাতীয় সম্প্রচারের মাধ্যমে লক্ষ্য করেছি।
মাদকাসক্তি রােধে প্রচেষ্টা : এখন দেশের সুস্থ, বিবেকবান ও চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ যুবসমাজের এহেন আসক্তি সম্পর্কে বিশেষ গুরুত্বের সাথে চিন্তা-ভাবনা করছেন। দেশকে বাঁচাতে হলে, দেশের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুপথে পরিচালিত করতে হলে যুবসমাজ থেকে এ মাদকাসক্তি অবশ্যই দূর করতে হবে। সুখের বিষয় দেশের সরকার ইতিমধ্যেই এ সম্পর্কে কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যে সব কারণে আমাদের প্রতিশ্রতিময় যুবসমাজ মাদকাসক্তির প্রতি ঝুঁকে পড়ছে সে সব কারণ সমাজ থেকে দূর করতে হবে এবং সে জন্য আজ প্রয়ােজন দায়িত্বশীল অভিভাবকের, তথা বয়স্ক নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। আমরা ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করেছি মাদকাসক্ত যুবক-যুবতীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য মাদকাসক্ত চিকিৎসা ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ‌।
মাদকাসক্তি রােধে করণীয় : যুবসমাজ থেকে মাদকাসক্তি দূর করার জন্য আমাদের কিছু বস্তুনিষ্ঠ পরামর্শ উল্লেখ করা প্রয়ােজন। যুবসমাজ যাতে মাদকাসক্তিতে আসক্ত বা আক্রান্ত না হয় তজ্জন্য মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে দেশে প্রচার মাধ্যমে দেশবাসী বিশেষ করে যুবসমাজকে অবহিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে দেশী ও বিদেশী অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া বিদেশী অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য এ সম্পর্কিত বইপত্রের আমদানি দেশে অচিরেই বন্ধ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বেকার যুবসমাজের মধ্যে যাতে হতাশা নেমে না আসে সে জন্য কর্মসংস্থানের সুযােগ বৃদ্ধি করতে হবে। যুবসমাজের সামনে উন্নত নৈতিক জীবনের প্রয়ােজনীয়তা সম্পর্কিত বইপত্র তুলে ধরতে হবে। এ কথায় নৈতিক চেতনা সৃষ্টির প্রয়াসে যুবসমাজের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় উপযুক্ত সুযোগ রাখতে হবে। মাদকাসক্তির পেছনে মূল কারণ হিসেবে মাদক দ্রব্যের চোরাচালানী সবচেয়ে মারাত্মক। এ চোরাচালন যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। সে জন্য প্রয়ােজন আন্তর্জাতিক সমন্বিত উদ্যোগ। প্রতিটি দেশ যদি সমন্বিত উপায়ে মাদ্রকদ্রব্য চোরাচালানের বিরুদ্ধে এমনকি মাদকদ্রব্য উৎখাতের প্রবল আন্দোলন গড়ে তােলে, তা হলেই মাদকাসক্তির ভয়াল ছােবল থেকে যুবসমাজ তথা দেশকে রক্ষা করা যাবে।
উপসংহার : পরিশেষে উল্লেখ্য যে, যুব সমাজের অবক্ষয় রােধে অভিভাবক তথা যুবসমাজের পিতা মাতাকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। পিতা মাতার ব্যক্তি চরিত্রের প্রভাব সন্তানের উপর সমধিক। কাজেই নিজেদের সন্তানকে সুপথে পরিচালিত করার ব্যাপারে পিতা-মাতার সতর্কতা ও সাবধানী ভূমিকা বিশেষ অত্যাবশ্যক‌। 

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment