SkyIsTheLimit
Bookmark

জনগণের সম্মতি রচনা


ভােট
বা জনগণের সম্মতি ও গণতন্ত্র
বা বাংলাদেশে ভােট ও নিরপেক্ষতা

ভূমিকা : গণতান্ত্রিক দেশে ভােট একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ভােটের গুরুত্ব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ ভােটের মাধ্যমে তাদের নেতা, নেত্রী, নীতি এবং কর্মসূচি নির্ধারণ করার সুযােগ পায়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নিয়মিত এবং নিরপেক্ষ ভােট ব্যবস্থা রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ ও শিক্ষা সচেতনতাবােধ সমৃদ্ধ করে তােলে।

ভােটের পূর্বকথা: যে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে সে দেশেই ভােটের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনৈতিক গণতন্ত্র সকল স্তরে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ভােটের সমঅধিকার সম্পন্ন নির্বাচনের উপর নির্ভরশীল। সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে ভাবাদর্শগত এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে বিজয়ী চিরায়ত বুর্জোয়াগােষ্ঠী মানুষের কতকগুলাে জন্মগত অধিকার স্বীকার করে নেয়। এ বিষয়টিই উদারনৈতিক গণতন্ত্র' নামে পরিচিত। যে রাষ্ট্র সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভােটাধিকারের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট অপরিসীম। সময় পর পর অনুষ্ঠেয় নিরপেক্ষ ভােটের মাধ্যমে সরকার গঠন এবং সরকার পরিবর্তনের রাজনৈতিক কাঠামাে বিন্যস্ত করে সে রাষ্ট্রই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় সর্বপ্রথম ভােট ব্যবস্থার প্রচলন হয়। বাংলাদেশে ভােটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা হয়।

ভােটের অধিকার : আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনসাধারণকে সক্রিয়ভাবে শাসন কাজে অংশগ্রহণের জন্যে ভােটদানের অধিকার দেয়া হয়েছে। এ অধিকার যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনসাধারণের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। কারণ, জনগণ তাদের ভােটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ জনসাধারণের পক্ষে সংসদে কথা বলে এবং শাসনকার্য পরিচালনা করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণই ক্ষমতার প্রধান উৎস। কারণ, জনগণ তাদের ইচ্ছে মত ভােট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।

প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ভােট : গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে ভােটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এ দুটি পদ্ধতিকে বলা হয় প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ভােট। প্রত্যক্ষ নির্বাচনে ভােটারগণ নিজেরাই সরাসরি ভােটদানের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করে থাকেন। আইনসভা এবং নিম্ন পরিষদের সদস্যগণ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানীয় পরিষদের সদস্যমণ্ডলী এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পরােক্ষ ভােট বলতে সেই ভােটদান পদ্ধতিকে বােঝায় যে পদ্ধতিতে সাধারণ ভােটারগণ ভােট দিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচনী সংস্থা গঠন করে, আর সেই সংস্থা চূড়ান্তভাবে প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান নির্বাচন করে।

প্রকাশ্য ও গোপন ভোট : এক সময় ভােটদান পদ্ধতি নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ ছিল। মতভেদ ছিল ভােটদান কি সকলের সামনে প্রকাশ্যে না গােপনে অনুষ্ঠিত হবে, এ বিষয়টি নিয়ে। প্রকাশ্যে ভােটদান পদ্ধতির সমর্থকরা এ পদ্ধতিকে একটি অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করে সেই কর্তব্য সকলের সামনে নির্ভয়ে পালন করা উচিত বলে মনে করেন। কিন্তু প্রকাশ্যে ভােট দেয়া ভােটারদের সৎ সাহসের পরিচায়ক হলেও বাস্তবিকপক্ষে এ পদ্ধতি ভােটদাতার জন্য হিতকর নয়। কারণ, সাধারণ ভােটদাতার চেয়ে নির্বাচন প্রার্থী সমাজের উচুস্তরের ব্যক্তি হয়ে থাকেন। নির্বাচন প্রার্থী চেষ্টা করেন। ভােটারদের উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য। যেহেতু বর্তমানে রাজনৈতিক দলের ভিত্তিতে নির্বাচন কার্য পরিচালিত হয় সেহেতু প্রত্যেক প্রার্থীর পেছনেই দলীয় শক্তি বিরাজমান থাকে। কাজেই প্রকাশ্য ভোটদান পদ্ধতিতে ভােটদাতা নানাভাবে নির্যাতিত হতে পারেন। প্রার্থী যদি জানতে পারেন কে তাকে ভােট দেয় নি তবে তিনি তার উপর প্রতিশােধ নিতে পারেন। এমনকি তার জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হতে পারে। মােটকথা, প্রকাশ্য ভােট ব্যবস্থায় অনেক জটিল সমস্যা রয়েছে। ফলে সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলােতে বর্তমানে গােপন ভােট ব্যবস্থাই প্রচলিত এবং প্রাধান্য লাভ করেছে।

অবাধ ও নিরপেক্ষ ভােট : ১৯৯১ ও '৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাংলাদেশে অবাধ এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অথচ এক সময়ের জনপ্রিয় শ্লোগান ছিল আমার ভােট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব।” আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটাই হল অবাধ ও নিরপেক্ষ ভােট ব্যবস্থার মূল কথা। যার ভােট সে দেবে এবং যাকে খুশি তাকে দেবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভােটাধিকার প্রয়ােগ ছাড়া অর্থবহ গণতান্ত্রিক সরকার আশা করা যায় না। জনগণের সর্বপ্রকার রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করাই নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। নিরপেক্ষ ভােটদান বলতে ভােটারগণের সঠিক নির্বাচনী ভূমিকা নিশ্চিত করা। ভােটের গােপনীয়তা বজায় রাখা, জাল ভােট বন্ধ করা, নির্বাচনে কারচুপি হতে না দেওয়া বা অন্যান্য যে কোন ধরনের অনিয়মতান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত থাকাকে বােঝায়। কিন্তু ভােটের ফলাফল যদি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে তবে সে নির্বাচন প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই নির্বাচনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্যে দলমত নির্বিশেষে সকলের আন্তরিক চেষ্টা থাকা প্রয়ােজন। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই সফল গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতির কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।

উপসংহার : বিশ্বের উন্নত দেশগুলােতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সাফল্য অর্জন করলেও অনুন্নত রাষট্রে ব্যর্থতাই পরিলক্ষিত হয়। অনুন্নত দেশগুলাের জনগণ তাদের ভােটাধিকার সঠিকভাবে প্রয়ােগ করতে পারে না। ফলে তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। অর্থ, অস্ত্র, পেশীশক্তির দাপট, সন্ত্রাস প্রভৃতি মানুষের ভােটাধিকার কেড়ে নেয়। এটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অশুভ, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত। মানুষের ভােটাধিকারের এ স্বাধীনতাটুকু ধরে রাখতে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলেই জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা পাবে এবং জাতীয় সমৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। তাই বলা যায়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে জনগণের ভােটাধিকার নিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment