SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা ই-মেইল

ভূমিকা :
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হলাে অফ লাইন ইন্টারনেট বা ই-মেইল। একে ইলেকট্রনিক ডাক ও বলা হয়। বিশ্বব্যাপী যােগাযােগের ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারে এটা সর্বাধুনিক মাধ্যম। মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত খবরাখবর পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে এর চেয়ে উন্নত মাধ্যম আর দ্বিতীয়টি নেই। তথ্যা বিনিময়, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক যােগাযােগের এমন অবারিত সুবিধা আর কোনাে মাধ্যম দিতে পারছে না এ অদৃশ্য যােগাযােগ প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর সকল মানুষকে একসূত্রে গেঁথে ফেলেছে। যােগাযােগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত বিশ্বমানবের সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে ই-মেইল।
ই-মেইল কী : ই-মেইল হলাে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য আদান -প্রদান ব্যবস্থা। ই-মেইল এর মাধ্যমে টেক্সট বার্তার সাথে কম্পিউটার ফাইলও পাঠানাে যায়। লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সীমিত স্থানের মধ্যে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা বিশ্বের যেকোনাে স্থানে ই-মেইল পাঠানাে যায়। ডাকযােগে চিঠি পাঠাতে হলে যেমন ঠিকানা প্রয়ােজন, তেমনি ই-মেইল পাঠাতেও ঠিকানা প্রয়ােজন। ইন্টারনেটে যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের ঠিকানা আছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডারের সাথে সংযােগ নেওয়ার সময় এ ঠিকানা সরবরাহ করা হয়। ইন্টারনেটে যুক্ত প্রতিটি কম্পিউটারের ঠিকানা অনন্য। ইন্টারনেটের বিধি মােতাবেক এ ঠিকানা দেওয়া হয়।
ই-মেইল উদ্ভাবন : ই-মেইল ইন্টানেট প্রযুক্তির একটি অন্যতম প্রযুক্তি। ১৯৬৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর সূত্রপাত ঘটে। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে উভয়পক্ষের সমর বিশারদগণ পারমাণবিক বােমার আতঙ্কে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেন। এমতাবস্থায় যােগাযােগ মাধ্যমকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য টেলিযােগাযােগের বিকল্পব্যবস্থা হিসেবে ই -মেইল উদ্ভাবন করা হয়। অতঃপর ই-মেইলের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ অপেক্ষাকৃত কম খরচে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যােগাযােগের ও তথ্য আদান -প্রদান করতে পারে।
ই-মেইলের কার্যপ্রক্রিয়া : ই-মেইল পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ নিকটবর্তী কোনাে সা্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে তথ্য আদান- প্রদান করে। ই-মেইল ব্যবহারের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রধান শহরগুলােতে সার্ভার স্থাপন করা হয়। এসব সার্ভার ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রধান সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকে। সার্ভারের নিজস্ব গ্রাহকগণ লােকাল কল এর মাধ্যমে প্রধান প্রধান শহরে স্থাপিত সার্ভারের সাথে সংযুক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট সার্ভারে তথ্য প্রেরণ করে। দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে সে সার্ভার জমাকৃত তথ্যসমূহ পাঠিয়ে দেয় ইন্টারনেটের সাথে সম্পৃক্ত প্রধান সার্ভারে। সেখান থেকে সকল তথ্য চলে যায় গ্রাহকদের নিজ নিজ ঠিকানায়। 
ই-মেইলের সুযােগ-সুবিধা : ই-মেইল করে টেক্সট বার্তার সাথে কম্পিউটারের অন্যান্য ইমেজ ফাইল ও এক স্থান থেকে অন্য স্থান প্রেরণ করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনাে স্থানে ই-মেইল পাঠিয়ে যােগাযােগ করা যায়। একটি টাইপ করা মেইল একাধিক ই-মেইল অ্যাড্রেসে প্রেরণ করা যায়। এক্ষেত্রে বার বার টাইপ করার প্রয়ােজন নেই। ই-মেইল -এর মাধ্যমে টেক্সট ডকুমেন্ট দ্বারা সরাসরি যেকোনাে কম্পিউটারে যােগাযােগ করা যায়। সরাসরি চিঠি প্রাপ্তি হিসেবেই ইলেকট্রনিক পদ্ধতির চিঠি হিসেবে ই-মেইল পদ্ধতির প্রচলন। স্বল্পতম সময়ে যােগাযােগের মাধ্যমে হচ্ছে ই-মেইল। কোনাে টেক্সট আকারের তথ্য যােগাযােগের ক্ষেত্রে ই-মেইল এর চেয়ে দ্রুত কোনাে মাধ্যম এখনাে আবিষ্কৃত হয় নি। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ই-মেইল যেতে এক সেকেণ্ডেরও কম সময় লাগে। ব্যবসায়িক যােগাযােগের ই-মেইল এক অভাবনীয় আবিষ্কার। ব্যবসায়ীরা তাদের অর্ডারে আদান-প্রদান ও ব্যবসায়িক খোঁজ খবরের জন্য ই-মেইল ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে যােগাযােগের জন্য ই-মেইল ব্যবহৃত হয়। 
ই-মেইলের ব্যবহার : ই-মেইল বিশ্ব যােগাযােগের ক্ষেত্রে এক আকস্মিক বিপ্লব এনে দিয়েছে। কেবল ব্যক্তিগত যােগাযােগের ক্ষেত্রেই নয়, ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, প্রভৃতি ক্ষেত্রেও ই-মেইলের ব্যবহার সহজতর ও ব্যাপক। বিশ্বের যেকোনাে প্রান্ত থেকে যেকোনাে শিক্ষার্থী ভর্তি বা লেখাপড়া সংক্রান্ত তথ্যাবলি ই-মেইলের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারে। ই-মেইল বিশ্ববাণিজ্য এনে দিয়েছে নতুন প্রাণ। জন্মদিন, বিভিন্ন দিবস, উপলক্ষ প্রভৃতিতে বহু দুরে অবস্থান করেও একজন শুভার্থী তার প্রিয়জনকে ই-মেইল এর মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানাতে পারে; প্রকাশ করতে। পারে দুঃখ। মােটকথা, ই-মেইল পত্র যােগাযােগের দ্রুততম একটি পদ্ধতি, যা নির্ভুল স্থানে, নির্ভুলভাবেই পৌছে যায়। 
ই-মেইলের ব্যবহারের সুবিধা : তথ্য আদান -প্রদানের ক্ষেত্রে ই-মেইলের ব্যবহার ঝামেলা বা ত্রুটিমুক্ত। সার্ভারের সুবাদে প্রেরকের প্রেরিত ই-মেইল সরাসরি প্রাপকের কম্পিউটার ডিকে গিয়ে জমা হয়। প্রাপককে শুধু নিজের কম্পিউটারে তথ্যসমূহ কপি করতে হয়। তাছাড়া সফওয়্যারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে ই-মেইল পাঠানাের পর ভুল হয়ে যাওয়া বা তথ্য বদলে যাওয়ার কোনাে রকম আশঙ্কা থাকে না। 
ই-মেইলের অপকারিতা : ই-মেইল ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ইতােমধ্যে এর মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রেরণ, গ্রাহকদের হয়রানি এবং অশ্লীলতা প্রসারের অভিযােগ উঠেছে। ই-মেইলের মাধ্যমে অপরাধী চক্র সহজেই নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় করছে এবং অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রেরন করে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। তবে উপকারের তুলনায় তা নিতান্তই কম ‌। 
বাংলাদেশে ই-মেইলের ব্যবহার : বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্টারনেটের পাশাপাশি ই-মেইলের ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ই-মেইল সার্ভিসের বিশাল জগতে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা, বিদেশ গমন, চাকরির সন্ধান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশী জনগণ আজ ই-মেইল ব্যবহার করে বহিবিশ্শ্বের সাথে যােগাযােগ রাখছে। 
উপসংহার : ই-মেইল আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞানে এক বিস্ময়কর সৃষ্টি এতে কোনাে সন্দেহ নেই। তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন ও প্রসারের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এর বহুমুখী সুবিধা আজ মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এটি জীবনকে করেছে স্বাচ্ছন্দ্যময়, বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। নানা সমস্যার কারণে বাংলাদেশে এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয় নি। তবে আশা করা যায়, চলমান বিশ্বের সাথে তাল মিলাতে অচিরেই বাংলাদেশের ই -মেইলের ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment